পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( e. বিভূতি-রচনাবলী খরিদার ব্যস্ত হইয়া পড়ে—অধিকাংশই পাড়াগেয়ে লোক, রেলের টাইমটেবিল মুখস্থ করিয়া তাহারা বসিয়া নাই, ইহাদের ধাধা লাগাইয়া দেওয়া কঠিন কাজ নয়। মতি চাকরকে শিখানে আছে, সে সময় বুঝিয়া রেল গাড়ীর ধুয়া তুলিয়া দিবে—আজ পাচ-বছর হাজারি দেখিয়া আসিতেছে এই ব্যাপার। নিজের হোটেল যখন সে খুলিবে ব্যবসাতে লাভ করিবার জন্য এসব হীন ও নীচ.কৌশল সে অবলম্বন করিবে না । স্তায্য পয়সা লইবে, ন্তাধ্যমত পেট ভরিয়া থাইতে দিবে। এই সব নিরীহ পল্লীবাসী রেলযাত্রীদের ঠকাইয়া পয়সা না লইলে যদি তাহার হোটেল না চলে, ন৷ হয় না-ই চলিল হোটেল। ফাকি দেওয়া যায় না হাটুরে খরিদ্ধারদের ! আজ মদনপুরের হাট—এখানকারও হাট। পাড়াগ হইতে দুধ ও তরিতরকারী লইয়া বহুলোক আসে—তাহারা অনেকে এখানে থায় । বার বার যাতায়াত করিয়া তাহারা চালাক হইয়া গিয়াছে—মতি চাকর প্রথম প্রথম দু-একবার ইহাদের উপর কৌশল খাটাইতে গিয়া বেকুব বনিয়াছে । তাহারা বলে—হোকৃ হোক্ গাড়ীর ঘণ্টা, লাও তুমি । না হয় পরের গাড়ীডায় যাবানি । তা' বলে সারাদিন খাটবার পরে ভাত ফেলে তো উঠতি পারিনে ? হ্যাদে লিয়ে এসো আর ছ-হাতা ডাল—ও ঠাকুর— ബ হাটুরে লোকজন খাইতে আসিতে আরম্ভ করিল। বেলা একটা। ইহাদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত । ইহারা চাষা লোক, খায় খুব বেশী ! তা ছাড়া খুব শোঁখীন রকমের খাদ্য না পাইলেও ইহাদের ক্ষতি নাই, কিন্তু পেট ভরা চাই । সাধারণ বাবু-খরিদাররের জন্য যে চাল রান্না হয়, ইহাদের সে চাল নয়। মোটা নাগর। চালের ভাত ইহাদের জন্য বরাদ্দ। ফেন মিশানো ডাল ও একটা চচ্চড়ি। ইছুাদের সাধারণত: দেওয়া হয় চিংড়ি মাছ বা কুচা মাছ । পোনা মাছ ইহাদের দিয়া পারা যায় না। কুচে চিংড়ি কিছু বেশী দিতেও গায়ে লাগে না । ইহাদের মধ্যে অনেক সময় হাজারির নিজের গ্রামের লোকও থাকে—তাহাদের মুখে বাড়ীর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু আজ তাহার স্বগ্রাম হইতে কেহ আসে নাই । রতন ঠাকুর নাই—এক হাতে এতগুলি লোকের রান্না ও পরিবেশন করিয়া হাজারি নিতান্তু কুস্তি দেহে ষখন খাইতে বসিবার যোগাড় করিতেছে তখন বেলা প্রায় তিনটার কম নয়। পদ্ম কি অনেকক্ষণ পূৰ্ব্বেই থালায় ভাত বাড়িয়া লইয়া চলিয়া গিয়াছে, বেচু চক্ষত্তি গণিতে বসিয়া এবেলার ক্যাশ মিলাইতেছেন—এই সময় পাশের হোটেলের বংশীধর ঠাকুর আসিয়া বলিল—ও ভাই হাজারি, দুটো ভাত হবে ? বংশীধর মেদিনীপুর জেলার লোক, তবে বহুকাল রাণাঘাটে থাকায় কথার বিশেষ কোন টান লক্ষ্য করা যায় না। সে বলিল, আমার এক ভাগ্নে এসেচে হঠাৎ এখন এই তিনটের গাড়ীতে। আজ হটবার, হাটুরে খদেরদের দল সব খেয়ে গিয়েচে, আমাদের খাওয়াও