পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢२ বিভূতি-রচনাবলী এসব । রান্না কাজ বড় ঝঞ্চাটের কাজ । ছেলেটি একটু হতাশ স্বরে বলিল—তবে কোন লাইন ধরবো বলুন মামা ? কত জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে দেখলাম। আজ ছ'মাস ধরে ঘুরচি। কোথাও কিছু জোটাতে পারিনি। আপনি বলচেন রাধুনীর কাজ—কলকাতায় একটা হোটেলের বাইরে লেখা ছিল—দুজন চাকর চাই । আমি গিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করলাম, বল্লে—কি ? “আমি বল্লাম—চাকরের কাজ খালি আছে দেখে এসেচি। বল্লে—তুমি ভদ্রলোকের ছেলে, এ কাজ তোমার জন্তে নয়। কত করে বল্লাম, কিছুতেই নিলে না। হাজারি অবাক হইয়া শুনিতেছিল। বলিল—বলে কি ? —তারপর শুনুন । কোথাও চাকুরি জোটে না । কলকাতায় শেষকালে খেতে পাইনে এমন হোল । দু-একদিন তো না খেয়েই কাটলো । তারপর ভাবলাম, আমার এক মামা রাণাঘাটে হোটেলে কাজ করেন সেখানেই যাই । তাই আজ এলাম—উনি আমার আপন মামা নয়। মায়ের শুৱতি ভাই । তা এখানেও আপনি বলচেন এ লাইন আমার জন্তে নয় —তবে কোথায় যাবে। আর কি-ই বা করবো ? ছেলেটির হতাশার স্বর এবং তাহার দুঃখ-কষ্টের কাহিনী হাজারির মনে বড় লাগিল। সে তখনও ভাবিতেছিল—আহা, ছেলেমাস্থ্য ! আমার বড় ছেলে সন্তু বেঁচে থাকলে এতদিন এত বড়টা হোত । টেপির সঙ্গে ভারি মানায় । সোনার চাদ হেন ছেলে । টেপি কি আর সে অদেষ্ট করেচে ! নাই বা হোল চাকুরি ! ও গিয়ে টেপিকে বিয়ে করে আমার বড় ছেলে হয়ে আমার গায়ের ভিটেতে গিয়ে বম্বক—ওকে কোনো কষ্ট করতে হবে না, আমি নিজে রোজগার করে ওদের খাওয়াবো । জমিজমাও তো আছে কিছু । খাওয়া শেষ করিয়া বংশীধরের ভাগিনেয়টি চলিয়া গেল বটে কিন্তু হাজারির প্রাণে যেন কি এক অনির্দেগু নূতন স্বরের রেশ লাগাইয়া দিয়া গেল । তরুণ মুখের ভঙ্গি, তরুণ চোখের চাহনি হইতে এত প্রেরণা পাওয়া যায় ?--- - জীবনে এ সব নবীন অভিজ্ঞতা হাজারির। বৈকালে চুণীর ধারের গাছতলায় নির্জনে বসিয়া সে কত স্বপ্ন দেখিল। নতুন সব স্বপ্ন। টেপির সহিত বংশীধরের ভাগিনেয়টির বিবাহ হইতেছে। বাধা কিছুই নাই, তাহাদেরই পালটি ঘর । টেপির ক্ষুদ্র, কোমল হাতখানি নরেনের বলিষ্ঠ হাতে তুলিয়া দিয়াছে’-দুই হাত একত্র মিলাইয়া হাজারি মেয়ে-জামাইকে আশীৰ্ব্বাদ করিতেছে । •••টেপির মার চোখ দিয়া আনন্দে জল পড়িতেছে—কি স্বন্দর সোনার চাদ জামাই ! কেন সে হোটেলে রাধুনীগিরি করিতে যাইবে ছেলেবয়সে ? হাজারির নিজের হোটেলে জামাই থাকিবে ম্যানেজার, চক্কত্তি মশায়ের মত গদিতে বসিয়া খরিদদারকে টিকিট বিক্রয় করিবে—হিসাবপত্র রাখিবে। দ্বিগুণ থাটিবার উৎসাহ আসিবে হাজারির—জামাইও ষা ছেলেও তাই । অত বড় আত