পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু হোটেল H সুন্দর, উপযুক্ত ছেলে । টেপির সারাজীবনের আনন্দ ও সাধের জিনিস। ওদের ছজনের মুখের দিকে চাহিয়া সে প্রাণপণে খাটিবে। তিন মাসের মধ্যে হোটেল দাড় করাইয় দিবে। বেল পড়িল । চুণীর খেয়ায় লোক পারাপার হইতেছে, যাহারা শহরে কেনা-বেচা করিতে আসিতেছিল—এই সময় তাহfরা বাড়ী ফেরে । একবার কুস্কমের সঙ্গে দেখা করিয়া হোটেলে ফিরিতে হইবে—গাছতলায় বসিয়া আর বেশীক্ষণ আকাশ-কুমম ভাবিলে চলিবে না। রতল ঠাকুর সম্ভব এবেলাও দেখা দিতেছে না, তাহাকে একাই সব কাজ করিতে হইবে । কিন্তু সত্যই কি আকাশ-কুমুম ? হোটেল তাহার হইবে না ? টেপির সঙ্গে ওই ছেলেটির— স্বাকৃ। বাজে ভাবনায় দরকার নাই । দেরি হইয়া যাইতেছে। পদ্ম ঝি বৈকালের দিকে হাজারিকে বলিল—বলি, হ্যাগো ঠাকুর, আজ মাছের মুড়োট। কি হ’ল গা ? আজ ত কর্তাবাবুর জর । তিনি বেলা এগারোটার মধ্যেই চলে গিয়েছেন— অত বড় মুড়োটার কি একটা টুকরোও চোখে দেখতে পেলাম ন— হাজারি মাছের মুড়োটা লুকাইয়া কুঙ্কমকে দিয়া আসিয়াছিল। বড় মাছের মুড়ে সাধারণতঃ কর্তার বাসায় যায়, কিন্তু আজ কৰ্ত্তার অম্লখ --তিনি বেশীক্ষণ হোটেলে ছিলেন না —মুড়োটা পদ্ম ঝি নিজের বাড়ী লইয়া যাইত—হাজারি কখনও মুড়ো নিজে খায় নাই— রতনঠাকুর খাইয়াছে, পদ্ম ঝি ত প্রায়ই লইয়া যায়—হাজffরর দাবি কি থাকিতে পারে না মুড়োর উপর ? তাই সে সেটা কুমমকে দিয়া আসিয়াছিল যখন ছুটি করিয়া চুণীর ঘাটে বেড়াইতে যায় তখন । পদ্ম ঝিয়ের প্রশ্নের উত্তরে হাজারি বলিল—কেন গা পদ্মদিদি, এতক্ষণ পরে মুড়োর খোজ হ’ল ? —এতক্ষণ পরেই হোক আর যতক্ষণ পরেই হোক—কি হ’ল মুড়োটা ? —আমায় কি একদিন খেতে নেই ? তোমরা ত সবাই খাও । আমি আজ খেয়েছি । —কই মুড়োর কঁাটাচোকডা ত কিছু দেখলাম না ? কোথায় বসে খেলে ? হাজারির বিব্রত ভাব পদ্ম ঝিযের চোখ এড়াইল না । সে চড়াগলায় বলিল—খfও মি তুমি । খেলে কিছু বলতাম না। তুমি সেটা লুকিয়ে বিক্ৰী করেছ—কেমন ঠিক কথা কি না ? চোর, জুয়াচোর কোথাকার—হোটেলের জিনিস মুকিয়ে মুকিয়ে বিক্ৰী ? আচ্ছা, তোমার চুরির মজা টের পাওয়াচ্ছি—আক্ষক কৰ্ত্ত— হাজারি বলিল—ন পদ্ম দিদি, বিক্রী করব কাকে ? রাধা মুড়ে কে নেবে ? সত্যি আমি খেয়েছি । —আবার মিথ্যে কথা ? আমি এতকাল হোটেলে কাজ করে হাতে ঘাট; পড়িয়ে ফেলহ, মাছের মুড়োর কাটাচোকডা আমি চিনিনে—না ? অত বড় মুড়োটা চার আনার কম বিক্রী কর নি। জমা দাও সে পয়সা গদিতে, ওবেলা নইলে দেখে কি হাল করি কৰ্ত্তার সামনে ।