পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০ বিভূতি-রচনাবলী থানায় গিয়া প্রায় ঘণ্টা দুই হাজারি ও মতি বসিয়া রহিল। হাজারি শুনিল বেচু চকত্তি ও পদ্ম ঝি দু’জনেই বলিয়াছে উহাদের উপরই তাহীদের সন্দেহ হয় । সুতরাং পুলিস তো তাহাদের ধরিবেই। থানার বড় দারোগ থানায় ছিলেন না-বেলা একটার সময় তিনি আসিয়া চুরির সব বিবরণ শুনিয়া হাজারি ও মতিকে তাহার সামনে হাজির করিতে বলিলেন । হাজারি হাত জোড় করিয়া দারোগীবাবুর সামনে দাড়াইল । দারোগীবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন—হোটেলে কতদিন কাজ করচ ? —আজ্ঞে বাবু, ছ’বছর । —বাসন চুরি করে কোথায় রেখে দিয়েচ ? —দোহাই বাবু—আমার বয়েস ছ’চল্লিশ-সাতচল্লিশ হোল—কখনো জীবনে একটা বিড়ি কারো চুরি করিনি— দারোগীবাবু ধমক দিয়া বলিলেন–ওসব বাজে কথা রাখো । তুমি আর ওই চাকর বেটা দুজনে মিলে যোগসাজসে চুরি করেচ। স্বীকার করো— —বাবু আমি এর কোনো বাৰ্ত্তা জানি নে ! আমি সে রাত্তিরে হোটেলেই ছিলাম না। —কোথায় ছিলে ? —ইষ্টিশানের প্ল্যাট্রফৰ্ম্মে শুয়ে ছিলাম সারারাত । —কেন ? —বাবু, আমি খাওয়া-দাওয়া করে চূণীর ঘাটে বেড়াতে যাই রোজ। ডড গবম ছিল বলে সেখানে একটু বেশী রাত পৰ্য্যস্ত ছিলাম—ফিরে এসে দেখি দরজা বন্ধ, তাই ইষ্টিশানে— এই সময় নেপালবাবু ইংরাজিতে বড় দারোগাকে কি বলিলেন । বড় দারোগী ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন—ও । আচ্ছ- তুমি কুসুম ব'লে কোনো মেয়েমানুষের বাড়ী যাতায়াত করো ? —বাবু, কুহুম আমার গায়ের মেয়ে। গরীব বিধবা, তাকে আমি মেয়ের মতো দেখি– সেও আমাকে বাবা বলে ডাকে, বাবার মত ভক্তিছেদ করে। যদি সেখানে গিয়ে থাকি, তাহোলে তাতে দোযের কথা কি আছে বাবু আপনিই বিবেচনা করে দেখুন। একথা লাগিয়েচে আমাদের হোটেলের পদ্ম ঝি—সে আমাকে দুচোখ পেড়ে দেখতে পারে না— কুসুমকেও দেখতে পারে না। আমাদের নামে নানারকম বিচ্ছিরি কথা সে-ই রটিয়েচে । আপনিই হাকিম—দেবতা। আর মাথার ওপর চন্দ্র স্বষ্যি রয়েচেন—আমার পঞ্চাশ বছর বয়েস হোতে গেল—আমার সেদিকে কখনো মতি-বুদ্ধি যায়নি বাৰু। আমি তাকে মেয়ের মত দেখি—তাকে এর মধ্যে জড়াবেন না—সে গেরস্তর বেী—মরে যাবে ঘেন্নায়। বড় দারোগ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ লোক। হাজারির চোখমুখের ভাব দেখিয় তাহার মনে হইল লোকটা মিথ্যা বলিতেছে না । বড় দারোগা মতি চাকরকে অনেকক্ষণ ধরিয়া জেরা করিলেন। তাহার কাছেও বিশেষ