পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գe বিভূতি-রচনাবলী ইহার উপর আর কত অত্যাচার করা চলিতে পারে। আজই এখান হইতে সরিয়া না পড়িলে উপায় নাই। হাজারি ঠিক করিল চা খাইয়া আর একটু বেলা গেলেই এখান হইতে রওনা হইবে। কুসুম পান সাজিয়া আনিয়া হাজারির সামনে মেঝেতে বসিল —তারপর এখন কি করবেন ভেবেচেন ? —ওই তো বল্লাম গোয়াড়ি গিয়ে চাকুরির চেষ্টা করি । —যদি সেখানে না পান ? —তবে কলকাতা যাবো। তবে পাড়াগায়ের মানুষ, কলকাতায় যাতায়াত অভ্যাস নেই —অত বড় শহরে থাকাও অভ্যাস নেই—ভয় করে । —আমার একটা কথা শুনবেন জ্যাঠামশায় ? —কি ? —শোনেন তো বলি । —বল না মা কি বলবে ? —আমার সেই গহনা বাধা দিয়ে কি বিক্রি করে আপনাকে দু’শো টাকা এনে দিই। আপনি তাই নিয়ে হোটেল খুলুন। আপনার রান্নার স্বখ্যাতি দেশ জুড়ে। হোটেল খুললে দেখবেন কেমন পসার জমে—এই রাণাঘাটেই খুলুন, ওই চকৃত্তির হোটেলের পাশেই খুলুন। পদ্ম চোখ টাটিয়ে মরুল । মেয়ের পরামর্শ শুতুন জ্যাঠামশায়—আপনার উন্নতি হবে—কোথায় যাবেন এ বয়সে পরের চাকুরি করতে । হাজারির চোখে প্রায় জল আসিল । কি চমৎকার, এই অদ্ভুত মেয়ে কুহুম ! মেয়েই বটে তাহার । কিন্তু তাহা হইবার নয়—নানা কারণে । কুনুমের টাকায় রাণাঘাটে হোটেল খুলিলে পাচজন পাচর কম বদনাম রটাইবে উভয়ের নামে । তাহার উপকার করিয়া নিরপরাধিনী কুসুম কলঙ্ক কুড়াইতে গেল কেন ? ওই পদ্ম ঝি-ই সাতরকম রটাইয়া বেড়াইবে গাত্রদাহের জালায় । তা ছাড়া যদি লোকসানই হয়, ধরো—( যদিও হাজারির দৃঢ় বিশ্বাস সে হোটেল খুলিলে লোকসান হইবে না ) তাহা হইলে কুম্বমের টাকাগুলি মারা পড়িবে। না, তার দরকার নাই। —ম কুসুম, একবার তো তোমাকে বলেছিলাম তোমার ও টাকা নেওয়া হবে না। আবার কেন সে কথা ? - আমাকে এই গাড়ীতে গোয়াড়ি যেতে হবে, উঠি ! কুস্কম গড় হইয়া প্ৰণাম করিয়া বলিল—আচ্ছা, কথা দিয়ে যান যদি গোয়াড়িতে চাকুরি না জোটাতে পারেন তবে আবার আমার কাছে ফিরে আসবেন ? —তোমার কাছে মা ? কেন বলে তো ? —এসে ওই টাকা নিতে হবে। হোটেল খুলতে হবে । ও টাকা আপনার হোটেলের জন্তে তোলা আছে। শুধু আপনার ভালোর জন্তেই বলচি তা ভাববেন না জ্যাঠামশায় । আমার স্বাৰ্থ আছে । আমার টাকাগুলো আপনার হাতে খাটলে তা থেকে দু’পয়সা আমিও