পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২ বিভূতি-রচনাবলী কয়দিন দোকানে অসম্ভব রকমের বিক্রি হইল। মূলধন ছিল আগের সেই দুই টাকা— শেষে খরিদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে হাজারি ধর মহাশয়ের তহবিল হইতে কয়েকটি টাকা ধীর লইল । চতুর্থ দিনের সন্ধ্যাবেলা দোকানপাট উঠানো হইল। মেলা শেষ হইয়া গিয়াছে। ধর মহাশয়ের তহবিলের দেনা শোধ করিয়া ও সকল প্রকার খরচ বাদ দিয়া হাজারি দেখিল সাড়ে তেরো টাকা লাভ দাড়াইয়াছে । ইহার উপর ধর মহাশয়ের রান্নার মজুরি দুই টাকা লইয়া মোট হইল সাড়ে পনের টাকা । প্রিয়নাথ ধর বলিলেন—ঠাকুর মশায়, আপনার রান্না যে এত চমৎকার, তা যখন আপনাকে সেগুল-বাগানে প্রথম কাজে লাগালুম, তখন ভাবি নি। আমি বড়লোক নই, বাড়ীতে মেয়েরাই রাধে, ন হোলে আপনাকে আমি ছাড়তুম না কিছুতেই । বাড়ীতে দশটি টাকা পাঠাইয়া দিয়া হাজারির মন খানিকট। স্বস্থ হইল। এখন সংসারের ভাবনা সম্বন্ধে মাসখানেকের মত নিশ্চিন্ত থাকিতে পারে সে । এই এক মাসের মধ্যে নতুন কিছু অবগুই জুটিয়া যাইবে । কালীগঞ্জ হইতে যশোর যাইবার পাকা রাস্ত বাহিয়া হাজারি আবার পথ চলিল। এই পথের দুধারে বনজঙ্গল বড় বেশী –পূৰ্ব্বে গ্রাম ছিল, ম্যালেরিয়ার অত্যাচারে বহু গ্রাম জনশূন্ত হইয়া যাওয়াতে অনাবাদী মাঠ ও বিধ্বস্ত পুরাতন গ্রামগুলি বনে-জঙ্গলে ছাইয়া ফেলিয়াছে। সকালবেল কাণীগঞ্জ হইতে রওনা হইয়াছে, যখন দুপুর উত্তীর্ণ হয়-হয়, তখন একটা প্রাচীন তেঁতুলগাছের ছায়ায় সে আশ্রয় লইল । অল্প দূরে একখানা ক্ষুদ্র চাষীদের গ্রাম। একটি ছোট ছেলে গরু তাড়াইয়া লইয়া যাইতেছে, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল গ্রামখানার নাম নতুন পাড়া । বেশীর ভাগ গোয়ালাদের বাস । হাজারি গ্রামের মধ্যে ঢুকিয়া প্রথমেই যে খড়ের বড় আটচালা ঘরখানা দেখিল তাহার উঠানে গিয়া দাড়াইল । বাড়ীর মালিক কাহাকেও দেখিল না। একদিকে বড় গোয়াল, অনেকগুলি বলদ গরু বিচালির জাব খাইতেছে । একটি ছোট মেয়ে বাহির হইয়া উঠানে দাড়াইল । হাজারি তাহাকে ডাকিয়া বলিল— খুকী শোনো—বাড়ীতে কে আছে ? মেয়েটি ভয় পাইয়া কোনো উত্তর না দিয়াই বাড়ীর ভিতর ঢুকিল । 惠 _ প্রায় আধঘণ্ট। অপেক্ষা করিবার পরে বাড়ীর মালিক আসিল । তাহার নাম শ্ৰীচরণ ঘোষ। হাজারিকে সে খুব খাতির করিয়া বসাইল, দুপুর গড়াইয়া গিয়াছে—মুতরাং রান্না-খাওয়া করিতে বলিল। বাড়ীর ভিতর হইতে একখানা জলচৌকি ও এক বালতি জল আনিয়া সামনে রাখিয়া দিল । ইহারাও গোয়ালঘরের একপাশে রান্নার যোগাড় করিয়া দিয়াছিল। সেখানে বলিয়া