পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓM বিভূতি-রচনাবলী কুসুম এবং এই মেয়েটি যদি তাহাকে টাকা দেয় তবে সে তাহার চিরদিনের স্বপ্নকে সার্থক করিয়া তুলতে পরিবে । ইহাদের টাকা সে নষ্ট করিবে ন!—বরং অনেক গুণ বাড়াইয়া ইহাদের হাতে তুলিয়া দিতে পরিবে । খাইতে বসিয়া হাজারি এসব কথা ভাবিয়া দেখিয়াছে ! -- ইহাদের বাড়ী হইতে বাহির হইয়া বড় রাস্তায় পড়িতে হইলে একটা পুকুরের ধার দিয়া যাইতে হয়—একটা বড় তেঁতুল গাছ এবং তাহার চারিপাশে অন্যান্য বন্য গাছের ঝোপ জায়গাটাকে এমন ভাবে ঢাকিয়া রাখিয়া দিয়াছে যে বাহির হইতে হঠাৎ সেখানে কেহ থাকিলে তাহাকে দেখা যায় না । পুকুরের পাড় ছাড়াইয়া হাজারি হঠাৎ দেখিল মেয়েটি তেঁতুলতলার ছায়ায় দাড়াইয়া আছে যেন তাহারই অপেক্ষায় । —চল্লেন খুড়োমশায় ? —ই্যা যাই, তুমি এখানে দাড়িয়ে ? —আপনি এই পথ দিয়ে যাবেন জানি, তাই দাডিয়ে আছি । দুটো কথা আপনাকে বলবে । আপনার হাতের রান্না চচ্চড়ি খেয়ে ভাল লেগেছে খুড়োমশায় । আমরাও তো রাধি, রান্নার ভাল মন্দ বুঝি । অমন রান্না কখনো খাই নি । আর একটা কথা হচ্ছে আমার টাকাটার কথা মনে আছে তো ? কি করলেন তার ? জানেন তো মেয়েরা শ্বশুরবাড়ীর লোকদের চেয়ে ব:ণের বাড়ীর লোকদের বেশী বিশ্বাস করে ? এদের হাতে ও টাকা পড়লে দুদিনে উড়ে যাবে। —টাকা তোমার এখুনি নিতে পারবো না মা । কিন্তু আবার আমি এই পথে আসবে, তোমার সঙ্গে দেখা করবো। তখন হয়তো টাকার দরকার হবে, টাকা তখন হয়তো নিতে হবে । - —কত দিনের মধ্যে আসবেন ? —ত বলতে পারিনে, ধর মাস দুই। পূজোর পরে কান্তিক-অঘ্রাণ মাসের দিকে তোমার সঙ্গে দেখা করবো f —কথা রইল তা হোলে ? —ঠিক রইল। এসে এসো, লক্ষ্মী ছোট্ট মা আমার—সাবিত্রী সমান হও, আশীৰ্ব্বাদ করি তোমার বাড়-বাড়ন্ত হোক । রেল পড়িয়া আসিয়াছে। হাজারি আবার পথ চলিতে লাগিল। গোয়ালাবাড়ীর সবাই এবেলা থাকিবার জন্য অনুরোধ করিয়াছিল, বউটি তো বিশেষ করিয়া। কিন্তু থাকিবার উপায় নাই, একটা কিছু যোগাড় না করা পর্য্যন্ত তাহার মনে স্থখ নাই । মেয়েটি খুব আশ্চৰ্য্য ধরণের বটে। নিৰ্ব্বোধ হয় তো–কুস্কমের মত বুদ্ধিমতী নয় ঠিকই, তবুও বড় ভাল মেয়ে । পথের দুধারে বনজঙ্গল ক্রমশঃ ঘন হইয়া উঠিতেছে—পথ নদীয়া জেলা হইতে যত যশোর