পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু হোটেল SSS আসিবার সময় কুষম সলজ্জ সঙ্কোচের সহিত হাজারির দেওয়া এক কঁাসি মাছ তরকারি লইয়া আসিল । এক বছর কাটিয়া গিয়াছে। হাজারি এড়োশোলা হইতে গরুর গাড়ীতে রাণাঘাট ফিরিতেছে, সঙ্গে টেপির মা, টেপি ও ছেলেমেয়ে । তাহার হোটেলের কাজ আজকাল খুব বাড়িয়া গিয়াছে। রাণাঘাটে বাসা না করিলে আর চলে না । টেপির মা বলিল—আর কতটা আছে হঁ্যা গা ? —ওই তো সেগুন বাগান দেখা দিয়েছে—এইবার পৌঁছে যাবো— টেপি বলিল—বাবা, সেখানে নাইবো কোথায় ? পুকুর আছে ন গাঙ ? —গাঙ আছে, বাসায় টিউব কল আছে। টেপির মা বলিল—তাহোলে জল টানতে হবে না পুকুর থেকে । বেঁচে যাই—— ইহাং কখনো শহরে আসে লাই—টেপির মীর বাপের বাড়ী এড়োশোলার দু ক্রোশ উত্তরে মণিরামপুর গ্রামে । জন্ম সেখানে, বিবাই এড়োশোলায়, শহর দেখিবার একবার হযোগ হইয়াছিল অনেকদিন আগে, অগ্রহায়ণ মাসে গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে একবার নবদ্বীপে রাস দেখিতে গিয়াছিল । হোটেলের কাছেই একখানা একতলা বাড়া পূৰ্ব্ব হইতে ঠিক করা ছিল। টেপির মা বাড়ী দেখিয়া খুব খুশি হইল। চিরকাল খড়ের ঘরে বাস করিয়া অভ্যাস, কোঠাঘরে বাস এই তাহার প্রথম । —ক’খানা ঘর গা ? :ান্নাঘর কোন দিকে ? কই তোমার সেই টিউকল দেখি ? জল বেশ ওঠে তো ? ওরে টেপি, গাড়ীর কাপড়গুলো আলাদা কবে রেখে দে—একপাশে । ও-সব নিয়ে ছিষ্টি ছোয়ানেপা করো না যেন, বস্তার মধ্যে থেকে একটা ঘটি আগে বের করে দাও না গো, এক ঘটি জল আগে তুলে নিয়ে আসি । একটু পরে কুহুম আসিয়া ঢুকিয়া বলিল—এ জেঠিম, এলেন সব ? বাসা পছন্দ হয়েছে তো ? টেপির মা কুস্বমকে চেনে । গ্রামে তাহাকে কুমারী অবস্থা হইতেই দেখিয়াছে। বলিল— এসো মা কুষম, এসো এসো ! ভাল আছ তো ? এসে এসো কলোণ হোক । o হোটেলের চাকর রাখাল এই সময় আসিল । তাহার পিছনে মুটের মাথায় এক বস্তা পাথুরে কয়লা। হাজারিকে বলিল—কয়লা কোনদিকে নামাবো বাৰু? হাজারি বলিল—কয়লা আনলি কেন রে ; তোকে যে বলে দিলাম কাঠ আনতে ? এরা কয়লার আঁচ দিতে জানে না। কুসুম বলিল—কয়লার উচন আছে ? আমি আঁচ দিয়ে দিচ্ছি। আর শিখে নিতে তো হবে জেঠিমাকে। কয়লা সস্তা পড়বে কাঠের চেয়ে এ শহর-বাজার জায়গায়। আমি