পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏ e বিভূতি-রচনাবলী —ঠিক বলচি । এবার ঘুরে জায়গা দেখে আসি। রাণাঘাট যাচ্ছি কাল সকালেই, হয় সেখানে, নয় তো গোয়াড়ির বাজারে জায়গা দেখবো । খবর পাবে তুমি, আবার ঘুরে আসচি তিন-চার দিনের মধ্যেই। অতসী বলিল—বাবার আহ্নিক করা হয়ে গিয়েচে, বাবা আসবেন, আপনি বম্বন, আমি আপনাদের চা নিয়ে আসি শুহন কাকাবাবু, আপনি যেদিন বাবার কাছে হোটেলের জন্তে টাকা চান, আমি সেদিন বাইরে দাড়িয়ে সব শুনেছিলাম। সেই থেকে আমি ঠিক করে রেখেছি আমার যা টাকা জমানে আছে আপনাকে তা দেবো । —আচ্ছা বল তো মা একট। সত্যি কথা—আমার ওপর তোমার এত দয়া হোল কেন ? —বলবো কাকাবাবু? আপনার দিকে চেয়ে দেখে আমার মনে হোত আপনি খুব সরল লোক আর ভালো লোক । আমার মনে বড় কষ্ট হয় আপনাকে দেখলে সত্যি বলচি—তবে দয়া বলচেন কেন ? অামি আপনার মেয়ের মত না ? বলিয়াই অতসী এক প্রকার কুষ্ঠা ও লজ্জা মিশ্রিত হাসি হাসিল । হাজারি বলিল—তুমি আর জন্মে আমার মা ছিলে তাই দয়ার কথা বলচি । নইলে কি সন্তানের ওপর এত মমতা হয় ? তুমি স্বখে থাকে, রাজরাণী হও—এই আশীৰ্ব্বাদ করচি। আমি তোমার গরীব কাক, এর বেশী আর কি করতে পারি। অতসী আগাইয়া আসিয়া হঠাৎ নীচু হইয়া হাজারির পায়ের ধুলা লইয়া প্ৰণাম করিল এবং আর একটুও না দাড়াইয়। তৎক্ষণাৎ বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেল । রাত্রে সারারাত্রি হাজারি ঘুমাইতে পারিল না। অতীব মত বড়ঘরের স্বন্দরী মেয়ের স্নেহ আদায় করার মধ্যে একটা নেশা আছে, হাজারিকে সে নেশায় পাইয়া বসিল । তাহার জীবনের এক অদ্ভুত ঘটনা। সকালে উঠিয়া সে রাণাঘাটে রওনা হইল। বেশী নয় পাচ ছ' মাইল রাস্ত, ইটিয়া বেলা সাড়ে আটটার সময় স্টেশনের নিকটে সেগুল-বনে গিয়া পৌছিল। রেল-বাজারের মধ্যে ঢুকিতেই তাহার ইচ্ছা হইল একবার তাহার পুরাতন কৰ্ম্মস্থানে উকি মারিয়া দেখিয়া যায়। আজ প্রায় পাঁচ মাস সে রাণাঘাট ছাড। দূর হইতে বেচু চক্ৰবৰ্ত্তীর হোটেলের সাইনবোর্ড দেখিয় তাহার মন উত্তেজনায় ও কৌতুহলে পূর্ণ হইয়া উঠিল । গত ছয় বৎসরের কত স্মৃতি জড়ানো অাছে ওই টিনের চালওয়ালা ঘরখানার সঙ্গে । হোটেলের গদিঘরে ঢুকিয়া প্রথমেই সে বেচু চক্কত্তির সম্মুখে পড়িয়া গেল। বেল প্রায় সাড়ে দশটা, খরিদার আসিতে আরম্ভ করিয়াছে, বেচু চকত্তি পুরোনো দিনের মত গঘিরে তক্তপোধের উপর হাতবাক্সের সামনে বসিয়া তামাক খাইতেছেন। হাজারি প্রণাম করিয়া দাড়াইতেই তিনি বলিলেন--অারে এই ষে হাজারিঠাকুর । কি মনে করে ? কোথায় আছ আজকাল ? ভাল আছ বেশ ? হাজারি এক মুহূর্কে আবার যেন বেচু চক্রবক্টার বেতনভুক রাধুনী বামুনে পরিণত হইল,