পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సి8 বিভূতি-রচনাবলী পয়সার বিডি কিনিয়া ধরাইল। চূণীর ধারে তাহার সেই পরিচিত গাছতলাটায় কতদিন বসা হয় নাই—সেখানে গিয়া আজ বসিতে হইবে। পথে রাধাবল্লভতলায় সে ভক্তিভরে প্রণাম করিল। আজ তাহার মনে যথেষ্ট আনন্দ, রাধাবল্লভ ঠাকুর জাগ্রত দেবতা, এমন দিনও তাহাকে জুটাইয়া দিয়াছেন। আজ ভোরে যখন বাড়ী হইতে বাহির হইয়াছিল, সে কি ইহা ভাবিয়াছিল ? অস্বপনের স্বপন । চোর বলিয়া বদনাম রটাইয়া যাহারা তাড়াইয়াছিল, আজি তাহারাই কিনা যাচিয় তাহাকে চাকুরিতে বহাল করিল। চূর্ণ নদীর ধারে পরিচিত গাছতলাটায় বসিয়া সে বিডি টানিতে টানিতে এক পয়সার বিড়ি শেষ করিয়া ফেলিল মনের আনন্দে। কুস্কমের বাডী এখন সব ঘুমাইতেছে, গৃহস্থ বাউীতে দেখাশুনা করিবার এ সময় নয় বেলা কখন পণ্ডিবে ? আস্তত: চারটা না বাজিলে কুমুমের ওখানে যাওয়া চলে না । এখনও দেড় ঘণ্টা দেরি । গোপালনগরের কুতুবাড়ী হষ্টতে তাহার কাপড়ের পুঢ়লিটী একদিন গিয়া আনিতে হইবে । গত মাসের মাহিনী বাকি আছে, দেয় ভালো, না দিলে আর কি করা যাইবে ? আজ একটু বাত থাকিতে উঠিবার দরুন ভাল ঘুম হয় নাই—তাহার উপরে অনেকদিন পরে হোটেলের খাটুনি, পাচক্রোশ পায়ে ইটি স্বগ্রাম হইতে রাণাঘাট আসা প্রভৃ তর দরুন হাজারির শরীর ক্লান্ত ছিল—গাছতলার ছায়ায় কখন সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। যখন ঘুম ভাঙিল তখন সূর্যের দিকে চাহিয় তাহার মনে হইল চারিটা বাজিয়া গিয়াছে । কিছুক্ষণের মধ্যে সে কুহুমের বাড়ীর দরজায় গিয়া কড়া নাড়িল । কুমুম নিজে আসিয়াই খিল খুলিল এবং হাজারিকে দেখিয়া অবাক হইয়া বলিল—জ্যাঠীমশায় ! কোথা থেকে ? আস্কন—অস্বিন— তার পরেই সে নীচু হইয়া হাজারির পায়ের ধুলা লইয়া প্ৰণাম করল । হাজারি হাসিমুখে বলিল—এস এস মা, কল্যাণ হোক । ছেলেপিলে সব ভাল তো ? এত রোগী হয়ে গিয়েছ, ইস্ ! তোমার কfকfর মুখে তোমার বড় অমুখের কথা শুনলাম । কুসুম বাড়ীর মধ্যে তাহাকে লইয়া গিয় ঘরের মেঝেতে শতরঞ্জি পাতিয়া বসাইল। বলিল—ভয় নেই জ্যাঠামশায় মরচি নে অত শীগগির । আপনি সেই যে গেলেন, আর কোনো খবর নেই। অমুখের সময় আপনার কথা কত ভেবেছি জানেন জ্যাঠামশায় ? মরেই যদি যেতাম, দেখা হোত আর ? অখদে আপদ না হোলে মরেই তে!— —fছ ছি, মা, ও রকম কথা বলতে আছে ? —কোথায় ছিলেন এতদিন আপনি ? আজ কোথা থেকে এলেন ? —এড়োশোল থেকে । কুষম ব্যস্ত হইয়া বলিল—হেঁটে এসেছেন বুঝি ? খাওয়া হয়নি ? হাজারি হাসিয়া বলিল—ব্যস্ত হয়ে না মা। বলছি সব। সকালে বেরিয়েছিলাম এড়োশোল থেকে, বলি যাই একবার রাণাঘাট, তোমার সঙ্গে দেখা করবার ইচ্ছে খুব হোল ।