পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু হোটেল Y eX আপনার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেবো—ঠিক । পনেরো দিন পরে হাজারি স্বগ্রামে সংসারের খরচপত্র দিতে গেল। বৈকালে হরিবাবুর বাড়ী বেড়াইতে গিয়া দেখিল হরিবাৰু বৈঠকখানায় আরও দুটি অপরিচিত ভদ্রলোকের সহিত বসিয়া কথা বলিতেছেন । তাঁহাকে দেখিয়া বলিলেন—এই যে এস হাজারি, বসে বসে । এরা এসেছেন কলকাতা থেকে অতসীকে দেখতে—তুমি এসেছ ভালই হয়েছে। রাত্রে আমার এখানে থেও আজি— অতসীর তাহা হইলে বিবাহ ? যদি ইতিমধ্যে তার বিবাহ হইয়া যায়, সে শ্বশুরবাড়ী চলিয়া গেলে টাকাকড়ির ব্যাপার চাপ পড়িয়া যাইবে। হাজারি একটু দমিয়া গেল। আধঘণ্ট। পরে হরিবাবু বলিলেন—আমি সন্ধ্যাহিকটা সেরে আঙ্গি—আপনাদের ততক্ষণ চা দিয়ে যাক । ভদ্রলোক দুইজন বলিলেন--তিনি ফিরিয়া আসিলে একত্রে চা খাওয়া যাইবে । তাহারা ততক্ষণ একবার নদীর ধারে বেড়াইয়া আসিবেন । অল্পক্ষণ পরেই অতসী আসিয়া বৈঠকখানায় বাড়ীর ভিতরের দিকের দরজা হইতে একবার সপ্তপণে উকি মারিয়া ঘরের মধ্যে ঢুকিল । —এসো, এলো মা । ভাল আছ ? —আপনি ভাল আছেন কাকাবাবু ? গোপালনগর থেকে আসছেন ? —না মা। আমি গোপালনগরে আর নেই তো ? রাণাঘাটের সেই হোটেলে কাজ আবার নিয়েছি যে । ওরা ডেকে বহাল করলে । —করবে না ? আপনার মত লোক পাবে কোথায় ? আমায় এবার একটা কিছু শিখিয়ে দিয়ে যান, কাকাবাবু। আপনার নাম করবো চিরকাল । —ম, এ হাতেকলমের জিনিস । বলে দিলে তো হবে না, দেখিয়ে দিতে হবে । তার স্থবিধে হবে কি ? আমি এর আগেও তোমাকে তো বলেছি একথা । —কাল আপনার বাড়ী যাবো এখন। টেপিকে বলবেন । তাকে নিয়ে এলেন না কেন ? তাকে নিয়ে আসবেন, সেও আমাদের এখানে রাত্রে খাবে। অতসী একটু পরেই চলিয়া গেল, কারণ আগন্তুক ভদ্রলোক দুটির গলার আওয়াজ পাওয়া গেল বাড়ীর বাহিরে রাস্তার দিকে । পরদিন সকালে টেপির মা উঠান বাট দিতেছে এমন সময়ে অতসী বাড়ীর উঠানের মাচাতলা হইতে ডাকিল—টে পি, ও টেপি— টে পির মা তাড়াতাড়ি হাতের ঝাটা ফেলিয়। সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। জমিদারের মেয়ে অতলী গ্রামের কাহারও বাড়ী বড় একটা যায় না, তাহাদের মত গরীব লোকের বাড়ী ষে যাতায়াত করিতেছে—ইহা ভাগ্যের কথাও বটে, গৰ্ব্ব করিয়া লোকের কাছে পরিচয় দিবার মত কথাও বটে।