পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

»ማፀ বিভূতি-রচনাবলী কামিনী প্রথমে আসিয়াই বিপিনের ছোট ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করিল। বাব, তারে তুমি কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বড় একটা ডাক্তার-টাক্তার দেখাও—ওখানে বঁচিবে না। রাণাঘাটের হাসপাতালে কি হবে ? ছোড়াভাকে তোমরা সবাই মেলে মেরে ফেলব। দেখছি । —করি কি মাস্টম, জান তো অবস্থা। বাবা মারা যাওয়ার পরে সংসারে আগের মত জুত নেই । বাবার দেনা শোধ দিয়ে— কামিনী ঝাঝিয়া উঠিয়া বলিল, কৰ্ত্তার দেনার জন্যে যায় নি—গিয়েছে তোমার উড়ষ্ণুড়ে স্বভাবের জন্তে—আমি জানি নে কিছু ? কৰ্ত্ত বা রেখে গিয়েছিলেন করে, তাতে তোমাদের দুই ভায়ের ভাতের ভাবনা হ’ত না । বিষয়-আশয়, গোলাপাল, তোমার পৈতের সময় হাজার লোক পাত পেড়ে বসে খেয়েছিল—কম বিষয়ড ক'রে গিয়েছিলেন কর্তা ? তোমরা বাবা সব খুচুলে। তার মত লোক তোমরা হলে তো ! s ধিপিন দেখিল সে ভুল করিয়াছে। বাবার কোন ক্রটির উল্লেখ ইহার সামনে করা উচিত হয় নাই—সে বরাবর দেখিয়া আসিয়াছে কামিনী মাসী তাহা সহ করিতে পারে না । ইহার কাছে কিছু টাকা আদায় করিতে হইবে, রাগাইয়া লাভ নাই। স্বর বেশ মোলায়েম করিয়া বলিগ, ও কথা যাক মাঙ্গীমা, কিছু টাকা দিতে পার, এই গোটা চল্লিশ টাকা। কিস্তির সময় আদায় ক’রে আবার দেব। • কামিনী পূৰ্ব্ববৎ ঝাঝের সঙ্গেই বলিল, টাকা, টাকা ! টাকার গাছ দেখেছ কিনা আমার ? সেবার এক কাড়ি টাকা যে নিলে আর উপুড়-হাত করলেন, আর একবার দেলাম কুড়ি টাকা পূজোর সময় তোমার কেবল টাকার দরকার হ’লেই—মালী মালী। বাতে যে পঙ্গু হয়ে পড়ে ছিলাম কুড়ি-পঁচিশ দিন-খোজ করেছিলে মাগীমা বলে ? বিপিন কামিনী মাসীকে কি করিয়া চালাইতে হয় জানে ! তরুণ-তরুণীদের কাছে প্রৌঢ় ব। প্রৌঢ়াদের দুর্বলতা ধরা পড়িতে বেশিক্ষণ লাগে না । তাহারা জানে উহাদের কি করিয়া হাতে রাখিতে হয়। স্বতরাং বিপিন হাসিয়া বলিল, খোকার ভাতের সময় তোমায় নিয়ে যাব বলে সব ঠিক মাসী, এমন সময় বলাইট অস্থখে পড়ল ; তোমার টাকাকড়িও সব তো এতদিন শোধ হয়ে যেত, ওর অন্বখটা যদি না হ’ত । কামিনী কিছুক্ষণ চুপ করিয়া কি ভাবিল, তারপর হঠাৎ জবাব দিল, আচ্ছ, হয়েছে ঢের, আর বলার কাজ নেই বাপু বেলা হয়েছে, চললাম আমি। কদিন আছ এখানে ? —মঙ্গলবার সন্দ্রেবেলা কি বুধবার সকালে যাব। মালীম, বা বললাম কথাটা মনে রেখ । টাকাটা যদি ৰোগাড় ক’রে দিতে পারতে, তবে বডড উপকার হত। তোমার কাছে না চাইব তো কার কাছে চাইব, বল ! ! কামিনী সে কথায় তত কান না দিয়া আপন মনে চলিয়া গেল। ৰাইবার সময় বলিয়া গেল, তোমার পাইককে কি ওই নটবন্ধের ছেলেটাকে আমার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিও, পেঁপে পেকেছে সঙ্গে দেৰ ।