পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জামাইটির সঙ্গে তাহার দেখা হুইল বিকালের দিকে । বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ বছর, একটু হৃষ্টপুষ্ট, চোখে চশমা, গম্ভীর মূখ-বৈঠকখানায় বসিয়া কি ইংরেজী কাগজ পড়িতেছিলেন। বিপিন বার কয়েক বৈঠকখানায় যাওয়া-আসা করিল বটে, কিন্তু জামাইবাৰু বোধ করি তাহার অস্তিত্বের প্রতি বিশেষ কিছু মনোযোগ না দিয়াই একমনে খবরের কাগজ পড়িয়া ঘাইতে লাগিলেন । বিপিনের রাগ হইল। তখনই সে সংকল্প করিল, সেও দেখাইবে, বড়লোকের জামাইকে সে গ্রাহও করে না । তুমি আছ বড়লোকের জামাই, তা আমার কি ? বিপিন বৈঠকখানা-ঘরে ঢুকিয়া ফরাশ বিছানো চৌকির এক পাশে বসিয়া রহিল খানিকক্ষণ নিঃশব্দে। দশ মিনিট কাটিয়া গেল, জামাইবাবু তাহার দিকে ফিরিয়াও চাহিলেন না বা একটা কথাও বলিলেন না । বিপিন পকেট হইতে বিড়ি বাহির করিয়া ধরাইল এবং ইচ্ছা করিয়াই ধোয়া ছাড়িতে লাগিল এমন ভাবে যাহাতে জামাইয়ের চোখে পডে। জামাইবাবু বোধ হয় এবার ধূম্ৰ হইতে বাহমান পৰ্ব্বতের অস্তিত্ব অনুমান করিয়া খবরের কাগজ চোখের সন্মুখ হইতে নামাইলেন । বিপিনকে তিনি চেনেন, বিবাহের পর দুই তিন বার দেখিয়াছেন, শ্বশুরের জমিদারির জনৈক কৰ্ম্মচারী বলিয়া জানেন । তাহাকে এরূপ নিৰ্ব্বিকার ও বেপরোয় ভাবে তাহার সম্মুখে বিড়ি ধরাইয়া থাইতে দেখিয়া তিনি বিস্মিত তো হইলেনই, লোকটার বেয়াদবিতে একটু রাগও হইল । কিন্তু সে বেয়াদবি সীমা অতিক্রম করিয়া তাহাকে সম্পূর্ণ নিৰ্ব্বাক করিয়া দিল, যখন সেই লোকটা দাত বাহির করিয়া একগাল হাসিয়া বলিল, জামাইবাবু, কেমন আছেন ? চিনতে পারেন ? বিড়ি-টিড়ি খান নাকি ? নিন না, আমার কাছে আছে । কথা শেষ করিয়া লোকট। একটা দেশলাই ও বিড়ি তাহার দিকে আগাইয়া দিতে আসিল । নিতান্ত বেয়াদব ও অসভ্য । জামাইবাবু বিপিনের দিকে না চাহিয়া গম্ভীর মুখে সংক্ষেপে উত্তর দিলেন, থাক, আছে আমার কাছে।—বলিয়া পকেট হইতে রৌপ্যনিৰ্ম্মিত সিগারেটের কেস বাহির করিয়া একটি সিগারেট ধরাইলেন। বিপিন ইহাতে অপমানিত মনে করিল। প্রতিশোধ লইবার জন্য পাণ্টা অপমানের অন্ত কোন ফাক খুজিয়া না পাইয়া সে বলিয়া উঠিল, জামাইবাবুর ও কি সিগারেট ? একটা এদিকে দিন দিকি ! বাষ্ট্ৰীয় গোমস্ত জমিদারবাবুর জামাইয়ের নিকট সিগারেট চায়, ইহার অপেক্ষা বেয়াৰি ও অপমান আর কি হইতে পারে ? বিপিন সিগারেটের জন্ত গ্ৰাহও করে না ; কিন্তু লোকটাকে অপমান করিয়াহ তাহার স্বখ । জামাইবাৰু কিভ রৌপ্যনিৰ্ম্মিত সিগারেট-কেস হইতে একটা লিগাৰেট ৰাহির করিয়া