পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ›ማU হাফহাতা ব্লাউজ পরিয়া আছে, পাড়াগায়ের মেয়ের তেমন আটপৌরে সাজ করিবার কল্পনাও করিতে পারে না, একথা বিপিনের মনে হইল । বিপিনের বাবা বিনোদ চাটুজে যখন এদের স্টেটে নায়েব ছিলেন, বিপিন বাপের সঙ্গে বাল্যকালে কত আসিত এদের বাড়ীতে, মানীর তখন নয়-দশ বছর বয়স । মানীর সঙ্গে সে কত খেলা করিয়াছে, মানীর সাহায্যে উপরের ঘরের ভাড়ার হইতে আমসত্ব ও কুলের আচার চুরি করিয়া দুইজনে সিড়ির ঘরে লুকাইয়া দাড়াইয়া খাইয়াছে, মানীর পড়া বলিয়া দিয়াছে। বিপিনের পৈতা হইবার পর মানী একবার বিপিনের ভাতের থালায় নিজের পাত হইতে কি একটা তুলিয়া দিয়া বিপিনের খাওয়া নষ্ট করার জন্য মায়ের নিকট হইতে খুব বকুনি খায়। সেই মানী, কত বড় হইয়া গিয়াছে ! ওর দিকে ধেন আর তাকানো যায় না । বিপিন বলিল, মানী, কেমন আছ ? —ভাল আছি। তুমি কেমন আছ বিপিনদা ? বিপিনের মনে হইল, তাহার সহিত কথা বলিবার জন্তই মানী এই জানালীর ধারে অনেকক্ষণ হইতে দাড়াইয়া আছে। মানীকে এক সময় বিপিন ষথেষ্ট স্নেহের চক্ষে দেখিত, ভালবাসা হয়তো তখনও ঠিক জন্মায় নাই ; কিন্তু বিপিনের সন্দেহ হয়, মানী তাহাকে ধে চক্ষে দেখিত তাহাকে শুধু "স্নেহ বা "শ্রদ্ধা’ বলিলে ভুল হইবে, তাহা আরও বড়, ভালবাসা ছাড়া তাহার অস্ত কোন নাম দেওয়া বোধ হয় চলে না । মানীর কথা বিপিন অনেকবার ভাবিয়াছে । এক সময়ে মানী ছিল তাহার চোখে নারীসৌন্দর্ঘ্যের আদর্শ। মনোরমাকে বিবাহ করিবার সময় বাসরঘরে মানীর মুখ কতবার মনে আসিয়াছে । তবে সে অfজ ছয়-সাত বছরের কথা, তাহার নিজের বয়সই হইতে চলিল সাতাশ-আটাশ । বিপিন বলিল, খুব ভাল আছি । তুমি যে মাথায় খুব বড় হয়ে গিয়েছ মানৗ ? —বিপিনদা, ওরকম ক’রে কথা বলছ কেন ? আমি কি নতুন লোক এলাম ? বিপিনের মনে পড়িল, মানীকে সে কখনো "তুমি' বলে নাই, চিরকাল ‘তুই’ বলিয়া আসিয়াছে ; এখন অনেক দিন পরে দেখা, প্রথমটা একটু সঙ্কোচ বোধ করিতেছিল, বলিল, কলকাতার লোক এখন তোরা, তুই কি আর সেই পাড়াগেয়ের ছোট্ট মানীটি আছিস । —তুমি কি আমাদের কাছারিতে কাজে ঢুকেছ ? —ই্যা। না চুকে করি কি, সংসার একেবারে অচল। তোর কাছে বলতে কোনও দোষ নেই মানী, যেদিন এখানে এলুম এবার, না হাতে একটি পয়সা, না ঘরে একমুঠে চাল। আর ধর লেখাপড়াই বা কি জানি, কিছুই না। —কিন্তু তুমি এখানে টিকতে পারবে না বিপিনদী। তুমি ঘোর খামখেয়ালী মাস্থ্য, তোমায় আর আমি চিনি নে ? বিনোদকাক ধে রকম ক’রে কাজ ক'রে টিকে থেকে গিয়েছেন, তুমি কি তেমন পারবে ? আজই কি সব করেছ, দু তিন টাকা খরচ ক’রে দিয়েছ—ম