পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ S রাত্রে বিপিনের ভাল ঘুম হটল না। মানীর সঙ্গে দেখা হওয়াতে তাহার মনের মধ্যে কেমন যেন সব গোলমাল হুইয়া গিয়াছে। মানী তাহার সঙ্গে কথা বলিবার জন্যই জানালার গারে দাড়াইয়া ছিল, তাহা হইলে সে আজও মনে রাখিয়াছে ! —তবে ৰে বলে, বিয়ে হলেই মেয়ের সব ভুলে যায় ! বিপিনের পৌরুষগৰ্ব্ব একটু তৃপ্ত হইয়াছে। মানী জমিদারের মেয়ে, সে গরিব, লেখাপড়া এমন কিছু জানে না, দেখিতেও খুব ভাল নয়, তবু তো মানী তাহারই সঙ্গেই নির্জনে কথা বলিবার জন্য লুকাইয়া জানালায় দাড়াইয়া ছিল । দুই-তিন দিনের মধ্যে মানীর সঙ্গে আর দেখা হইল না। অনাদিবাবু তাহাকে লইয়া হিসাবপত্র দেখিতে বসেন, রোকড় আজ জুই মাস লেখা হয় নাই, খতিয়ান তৈয়ারি নাই, মাসকাবারি হিসাবের তো কাগজই কাটা হয় নাই । খাইবার সময় বাড়ীর মধ্যে যায়, খাইয়া জাসিয়াই কাছারি-বাড়ীতে গিয়া জমিদারবাবুর সামনে বসিয়া কাজ করিতে হয়। অনাদিবাৰু লোক খারাপ নন, তবে গভীর প্রকৃতির লোক, কথাবার্তা বেশি বলেন না। জমিদারির কাজ খুব ভাল বোঝেন, তিনি আসনে বসিয়া থাকিলে কাজে ফাকি দেওয়া শক্ত । . —বিপিন, গত মাসের প্রজাওয়ারী হিসেবটা একবার দেখি। বিপিন ফাপরে পড়িল । সে-খাতায় গত তিন মাসের মধ্যে সে হাতই দেয় নাই । —ও খাতা এখন তৈরি নেই। —তৈরি নেই, তৈরি কর । কিস্তির আর দেরি কি ? এগনও যদি তোমার সে হিসেব তৈরি না থাকে— তারপরে আছে নানা ঝঞ্চাট । জেলের কোমড়-জাল ফেলিয়াছিল পুটিখালির বাওড়ে, বিপিনই জাল পিছু পাচ টাকা হিসাবে তাহদের বন্দোবস্ত দিয়াছিল ; আজ চার মাস হইয় গেল, কেহ একটি পয়ল আদায় দেয় নাই। সেজন্যও জমিদারবাবুর কাছে কৈফিয়ৎ দিতে দিতে প্রাণ গেল। আজই অনাদিবাবু বলিলেন, তুমি খেয়ে-দেয়ে বীরু হাড়ীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই একবার ঘোধপুরে যাও, আজ কিছু বেটাদের কাছ থেকে আনতেই হবে । মেয়ে জামাই এখানে রয়েছে, খরচের অঙ্ক নেই। আজ অস্তত কুড়িটি টাকা নিয়ে এস। এই রৌত্ৰে খাইয়া উঠিয়াই ঘোষপুরে ছুটিতে হইবে । নায়েব গোমস্ত প্ৰজাবাড়ী তাগাদ করিতে দৌড়ায় কোন জমিদারিতে ? ইহান্ধের এখানে এমনই ব্যবস্থা। পাইকপেয়াদার মধ্যে বীরু হাড়ী এক হইয়াও বহু এবং বহু হইয়াও এক । বাজে পয়লা