পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার $$') তাহাকে চিঠি লিখিবার। তবুও তো সে এক বৎসর পলাশপুরে চাকুরি করিতেছে, তাহার এই প্রথম স্ত্রীর নিকট হইতে দূরে বিদেশে প্রবাসস্থাপন, অন্ত অস্ত স্ত্রীরা কি তাহাজের স্বামীদের নিকট এ অবস্থায় এই রকম কাঠখোট্ট চিঠি লেখে ? বিপিন জানে না, এ অবস্থায় স্ত্রীর স্বামীদের কি রকম চিঠি লেখে । কিন্তু তাহার বিশ্বাস, বিরহিণী স্ত্রীরা বিরহবেদনায় অস্থির হইয়া প্রবাসী স্বামীদের নিকট কত রকমে তাছাদের মনের ব্যথা জানায়, বার বার মাথার দিব্য দিয়া বাড়ী অালিতে অনুরোধ করে । নাটক-নভেলে সে এইরূপ পড়িয়াছেও বটে। প্রথম কথা, মনোরম তাহাকে চিঠিই কয়খানা লিথিয়াছে এক বছরের মধ্যে ? পাচ-ছয়খানার বেশি নয় । অবশ্ন তাহার একটা কারণ বিপিন জানে, ংসারে পয়সার অনটন। একখানা থামের দাম চার পয়সা, সংসারের খরচ বঁাচাইয়া জোটানে। মনোরমার পক্ষে সহজ নন। সে স্বাক, কিন্তু সেই চার-পাচখানা চিঠিতেও কি দুই একটা ভাল কথা লেখা চলিত না ? মনোরমার চিঠি আসে, টাকা পাঠাও, চাল নাই, তেল নাই, অমুকের কাপড় নাই, তুমি কেমন আছ, আমরা ভাল আছি। কখনও এ কথা থাকে না, একবার বাড়ী এস, তোমাকে অনেকদিন দেখি নাই, দেখিতে ইচ্ছা করে । বিপিন চিঠি পাইয়া বাড়ী যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিল, স্ত্রীকে দেখিবার জন্ত নয়, বলাইকে হাসপাতাল হইতে বাড়ী লইয়া যাইবার জন্ত । ছোট ভাইটিকে সে বড় ভালবালে । রাণাঘাটের হাসপাতালে পড়িয়া থাকিতে তাহার কষ্ট হইতেছে, বাড়ী যাইতে চায়, ভরসা করিয়ু৷ দাঙ্গাকে লিখিতে পারে নাই, পাছে দাদা বকে । তাহাকে বাড়ী লইয়া ৰাইতেই হইবে। সে পলাশপুর রওনা হইল। তিন দিনের ছুটি চাহিতেই জমিদারবাবু বলিলেন, এই তো সেদিন এলে হে বাড়ী থেকে, আবার এখুনি বাড়ী কেন ? বিপিন জমিদারকে সমীহ করিয়া স্ত্রীর চিঠির কথা পূৰ্ব্বে বলে নাই, এখন বলিল। ভাইকে হাসপাতাল হইতে লইয়া যাইবার কথাও বলিল । অনাদিবাবু অপ্রসন্ন মুখে বলিলেন, যাও, কিন্তু তুমি বাড়ী গেলে আর আসতে চাও না। জামাই চ'লে গিয়েছেন, মানী এখানে রয়েছে, সামনের শনিবারে আবার জামাই আসবেন । রোজ ছ তিন টাকা খরচ। তুমি মহাল থেকে চলে এলে আদায়-পত্তর হবে ন, আমি পড়ে যাব বিষম বিপদে ; তিন দিনের বেশি আর এক দিনও যেন না হয়, ব’লে शिलांश । মানীর সঙ্গে দেখা করিবার প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও বিপিন দেখিল, তাহা একরূপ অসম্ভব। সে থাকে বাড়ীর মধ্যে, তাহাকে ভাকিয়া দেখা করিতে গেলে হয়তো মানীর মা সেটা পছন্দ করিবেন না । - খাইবার পূর্বমুহূর্বে কিন্তু বিপিন ইচ্ছাটা কিছুতেই দমন করিতে পারিল না। একটিমাত্র ছুতা ছিল, বিপিন সেইটাই অবলম্বন করিল। সে ধাইবার পূৰ্ব্বে একবার জমিদার-গৃহিণীর নিকট বিদায় লইতে গেল । 豪