পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৮ বিভূতি-রচনাবলী দুই ভাইয়ে মিলিয়া থাটিলে সংসারের উন্নতি হইতে কত দেরি লাগিবে ? সে নিজে বিবাহ করে নাই, করিবেও না । মা, বউদিদি, ভানু, বীণ!—এর স্বর্থী হইলেই তাহার মখ । গোলী দেখিলে মায়ের চোখ দিয়া জল পড়ে। মা বলে, কর্তার আমলে এর চেয়েও বড় গোলা ছিল বাড়ীতে, আজকাল দুটো লক্ষ্মীর চি ড়ে কোটার ধান পাই না। মায়ের চোখের জলসে ঘূচাইবে । বাবার গোলা ছিল পনরো হাতের বেড়, সে গোল বঁধিবে আঠারো হাতের বেড়। Nව්‍ර বেলা এগারটার সময় বিপিন ও বলাই বাড়ী পৌছিল। ইহাদের আজই বাড়ী আসিবার কোন সংবাদ দেওয়া ছিল না। বিশেষতঃ বলাইকে আসিতে দেখিয়া বিপিনের মা ছুটিয়া গিয়া রুগ্ন ছেলেকে জড়াইয়া ধরিলেন। বীণ, মনোরমা, তাঙ্ক, টুনি—সকলেই বাহির হইয়া আসিয়া রোয়াকে দাড়াইল । উ:, সেই রাণাঘাটের হাসপাতাল, আর এই বাড়ীর তাহার প্রিয়জন সব—বউদিদি, মা, দিদি, খোকা, খুকী ! বলাই আনন্দে কাদিয়াই ফেলিল ছেলেমানুষের মত। ভাস্থ টুনিও খুশিতে আটখানা। কাকাকে তাহারা ভালবাসে। এতদিন পরে কাকাকে ফিরিতে দেখিয়া তাহদেরও আনন্দের সীমা নাই। কাকার গলা জড়াইয়া পিঠের উপর পড়িয়া তাহারা তাহাদের পুরাতন কাকাকে খুজিয়া বাহির করিতে চাহিতেছে। ঘরের মধ্যে চুৰিয়া বিপিন পুটুলি নামাইয়া রাখিতেছে, মনোরম আসিয়া হাসিমুখে বলিল, তা হ’লে আমার চিঠি পেয়েছিলে ? কই, উত্তর তো দিলে না ? বিপিন বলিল, উত্তর আর কি দোব ? এলাম তো চ’লে বলাইকে নিয়ে । —ভালই করেছ। ঠাকুরপো তোমায় লিখতে সাহস করত না, কেবল আমায় চিঠি লিখত—আমায় বাড়ী নিয়ে ধাও, আমায় বাড়ী নিয়ে যাও। আহা, ও কি সেখানে থাকতে পারে । ছেলেমান্থব, তাতে ওর প্রাণ পড়ে থাকে সংসারের ওপর । হ্যা গা, ওর অস্বথ কেমন ? ডাক্তারে কি বললে ? —বললে তো, এখন ভালই। তবে সাবধানে রাখতে হবে । ওকে বেশি খেতে দেবে না। মাকে ব’লে দিও, যেন যা তা ওকে না খেতে দেয়। মাংস খেতে একেবারে বারণ কিন্তু। —তবেই হয়েছে। যা মাংস খেতে ভালবাসে ঠাকুরপো, ওকে ঠেকিয়ে রাখা ভীষণ কঠিন। আর কি জান, বাড়ী এসেছে, এখন ওর আবদারের জালায় ওকে মাংস না দিয়ে পারা বাবে ? তুমি যে কদিন বাড়ী আছ, তারপর ও কি কারও কথা মানবে ? নিজেই পাড়া থেকে খালি কাটিয়ে ভাগাভাগি ক’রে বিলি ক’রে দিয়ে নিজের ভাগে দেড় সের মাংস নিয়ে এসে ফেলবে।