পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ه ه چ আগাইয়া দিল । বিপিন বলিল, চাচা, তোমাকে তো কক্ষণও বিনি কাজে থাকতে দেখি না ? চোখে ঠাওর হয় ? —না বাবাঠাকুর, ভাল আর কনে ? হ্যাদে, একখানা চশমা এনে দিতি পার ঐ চশমা ন’লি আর চকি ভাল ঠাওর পাই নে ঝে ! 會 —বয়েস তোমার তো কম হ’ল না চাচা, চোখের আর দোষ কি বল ! —তা একশো হয়েছে। যেবার মাৎলার রেলের পুল হয়, তখন আমি গরু চরাতি পারি। আপনি এখন হিসেব ক’রে দেখ । এ দেশে সবাই বলে আইনদির বয়স একশো। আইনদি নিজেও তাই বলে। আবার কেহ কেহ অবিশ্বাস করে। বলে, মেরে কেটে নব্বই বিরেনব ই । একশো ! বললেই হ’ল বুঝি। মাৎলার পুল কত সালে হয় বিপিন তাহা জানে না, স্বতরাং আইনদির বয়সের হিসাব তাহার দ্বারা হুইবার কোনও সম্ভাবনা নাই বুঝিয়া সে অন্য কথা পাড়িল। বলিল, চাচা, তুমি অনেক রকম মস্তরতস্তর জান, এ কথাটা তো শুনে আসছি বহুদিন । বিপিন এই একই কথা অস্তত বিশ বার আইনদিকে জিজ্ঞাসা করিয়া আসিতেছে গত দশ বৎসরের মধ্যে। আইনদিও প্রত্যেক বারেই একই উত্তর দেয়, একই ভাবে হাত পা নাড়িয়া। আজও সে সেই ভাবেই বেশ একটু গর্বের সহিত বলিল, মস্তর ? তা বেশি কথা কি বলব, আপনাদের বাপ-মার আশীৰ্ব্বাদে মস্তর সব রকম জানা ছেল । সেসব কথা বলে কি হবে, এদিগরের কোন লোকটা জানে না আমার নাম ? তবে এই শোন । শম্ভভরে যাব, আগুন খাব, কাটামুণ্ডু জোড়া দেব বিপিন এ কথা আইনন্দির মুখে অনেকবার শুনিয়াছে, তবুও বুদ্ধকে ঘাটাইয়া এ সব কথা শুনিতে তাহার ভাল লাগে । বিপিনের হাসি পায় এ কথা শুনিলে, কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই যে, আইনদির উপর শ্রদ্ধা তাহাতে কিন্তু কমে না। বিপিন যুবক, এই শতবর্ষজীবী বুদ্ধের প্রত্যেক কথা হাবভাব তাহার কাছে এত অদ্ভূত রহস্যময় ঠেকে ! এইজন্তই সে বাড়ী থাকিলে মাঝে মাঝে ইহার নিকট আসিয়া খানিকক্ষণ কাটাইয়া যায় । এ যে জগতের কথা বলে, বিপিনের পক্ষে তাহ অতীত কালের জগৎ । বিপিনের সঙ্গে সে জগতের পরিচয় নাই। নাই বলিয়াই তাহা বুহুস্তময়। আইনদি তামাক সাজিয়া হাতখানেক লম্বী এক খণ্ড সোলার নীচের দিকে বাশের সরু শলার সাহায্যে একটা ফুটা করিয়া বিপিনের হাতে দিয়া বলিল, তামাক সেবা কর বাবাঠাকুর। বিপিন বলিল, চাচা, তুমি কানসোনার কুঠা দেখেছ ? —খুব। তখন তো আমার অনুরাগ বয়েস। কুঠার মাঠে নীলের চাষ দেখিছি। এই শোনবা ? আমার সম্বদ্ধির ছেলে জহিরদি তখন জন্মায়, তিনি বড় চাকরি করত, এখন কুড়ি টাক ক’রে পেন্সিল থাচ্ছে । তা ভাব তবে সে কত দিনির কথা । বিপিন বলিল, কি চাকরি করত ?