পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8रै বিভূতি-রচনাবলী বটুক, না খেয়ে কষ্ট যদি পাও, সেও ভাল, কিন্তু নারায়ণ-শিলা হাতে শুদ্ধরের বাড়ী কখনও ঢুকে না। আমাদের বংশে ও কাজ কখনও কেউ করে নি, বুঝলে ? বিপিন বলিল, হু । —তা সেই পটল আজ উকিল হয়েছে, কালী তরফদার মারা বাওয়ার পর হাতে কিছু টাকাও আজকাল পেয়েছে শুনেছি। তা ছাড়া টাকা জমাতে কি করে হয়, তা ওরা জানে। হাড় কলুষ ছিল সেই কালী তরফদার, তার ছেলে তো ? ওদের আদি বাড়ী শাস্তিপুর, তা জান তো ? ওর জ্যাঠামশায় এখনও শাস্তিপুরের বাড়ীতেই থাকে। জমিজমা আছে শাস্তিপুরে। বেশ বড় বাড়ী, দোমহলা । | 63 س-- —অনেকদিন আগে একবার শান্তিপুর গিয়েছি রাস দেখতে, ভারি ষত্ব-আত্যি করলে আমাদের। শাস্তিপুরের রাস দেখেছ কখনও ? দেখবার মত জিনিস ; অত বড় মেলা এ দিগরে হয় না কোথাও । —6 | —এখানে তামাক-টামাক দেবার কেউ নেই ? বল না একটু ডেকে। অার একটু চা যদি হয়, কাউকে বলে পাঠাও না। আমি এসেছি শুনলেই বউমা চ পাঠিয়ে দেবেন। তবে শোন, একটা রাসের মেলার গল্প করি । সেবার হ’ল কি জান—ওই ষে চাকরটা যাচ্ছে—ও খামহরি, শোন একবার এদিকে বাবা, বাড়ীর মধ্যে যা তো, বলগে, ভটচাজ্যি মশাই একটু চা খেতে চাইছেন, আর একবার এক কলকে তামাক দিয়ে যা তো বাবা। বিপিন চা খাবে কি ? ও কি, উঠছ কোথায় ? ব’স, ব’স । —অজ্ঞে, আপনি বসে চা খান। আমি একটু তাগাদায় যাব ওপাড়ায়, বাবু ব’লে গিয়েছেন, কিছু টাকা পাওয়া যাবে, এখন না গেলে হবে না ; সন্ধ্যে হয়ে এল। আমি আসি। বিপিন বাহির হইয়া পড়িল। বটুক ভটচাজের সঙ্গে বসিয়া গল্প করা বর্তমানে তাহার মনের অবস্থায় সম্ভব নয় । সব নষ্ট হইয়া গেল। অনাদিবাবু সন্ধ্যার পরই আসিয়া পড়িবেন। তাহাকে তাহার সঙ্গে বসিয়া মুখ বুজিয়া খাইতে হইবে ; তাতার পর বৈঠকখানায় আসিয়া চুপচাপ শুইয়। পড়িতে হইবে। হয়তো সে সময়ে অনাদিবাবু গড়গড় হাতে বাহিরে আসিয়া তাহাকে জমিদারী সংক্রাস্ত কিছু উপদেশ দিবেন, তাহাও শুনিতে হইবে । তারপর কাল সকালে আর সে কোন ছুতায় পলাশপুরে বসিয়া থাকিবে ? তাহার তো আসার কথাই ছিল না। টাকা আনিবার ছুতায় সে আসিয়াছে। টাকা ইরশালে ধরা হইয়া গিয়াছে, তাহার কাজও শেষ হইয়াছে। ধাও চলিয়। ধোপাখালির কাছারি। মিটিয়া গেল। বিপিন উদভ্রাস্তের মত কিছুক্ষণ রাস্তায় রাস্তায় পায়চারি করিয়া বেড়াইল । সন্ধ্যার বেশি দেরি নাই। হয়তো এতক্ষণ অনাদিবাৰু আসিয়া পড়িয়াছেন। আচ্ছ, সে একটু দেরি করিয়াই যাইবে ।