পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিভূতি-রচনাবলী মানী চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। —অনেকদিন তোকে দেখি নি, কথাও বলি নি, এলি আর চ'লে যাবি চা করতে ? চা কি এত ভাল জিনিস যে, না খেলে দিন যাবে না। অামি যেতে দোব না তোকে । এখানে দাড়িয়ে থাক । @ মানী শাস্তম্বরে মৃদু হাসিমুখে বলিল, বিপিনা, মেয়েমানুষের একটা কৰ্ত্তব্য আছে। তুমি তেতে-পুড়ে এসেছ রাস্ত হেঁটে, আর আমি তোমার মুখে একটু জল দেবার ব্যবস্থা না ক’রে সঙের মত তোমার সামনে দাড়িয়ে থাকব—এ হয় না। তুমি একটু ব’ল, আমি আগে চা আনি, খেয়ে যত খুশি গল্প ক'র। আমি পালিয়ে ষাচ্ছি না। আমারও কি ইচ্ছে নয় তোমার সঙ্গে দুটো কথা কইবার ? মিনিট পনরো—প্রত্যেক মিনিট এক একটি দীর্ঘ ঘণ্ট—কাটিয়া গেল। মানীর তবুও দেখা নাই।’ অনাদিবাৰু কি আসিলেন ? বাহিরে গরুর গাড়ীর শব্দ হইল না? না, কিছু নয়। অন্য গরুর গাড়ী রাস্ত দিয়া যাইতেছে। প্রায় পচিশ মিনিট পরে মানী আসিল । একটা থালায় খানকতক পরোট, একটু আলুচচ্চড়ি, একটু গুড়। বিপিনের সামনে থালা রাখিয়া বলিল, ততক্ষণ খাও, আমি চা আনি। কতক্ষণ লাগল ? এই তো গিয়ে ময়দা মেখে বেলে ভেজে নিয়ে এলুম। চায়ের জল ফুটছে, এখুনি আনছি ক’রে । সব কখানা কিন্তু খাবে, নইলে রাগ করব, আস্তে আস্তে খাও । বিপিনের সত্যই অত্যন্ত ক্ষুধা পাইয়াছিল। পরোট। কখান সে গোগ্রাসে খাইতে লাগিল। অনাদিবাৰু বুঝি আসিলেন ? গরুর গাড়ীর শব্দ না ? চা করিতে এত সময় লাগে ? কত যুগ ধরিয়া মানী কেটলিতে চায়ের জল ফুটাইতেছে— যুগ-যুগান্তর ধরিয়া চায়ের জল ফুটিতেছে। মানী আসিল । এক পেয়ালা চা এক হাতে, অন্য হাতে একটি ছোট খাগড়াই কাসার রেকাবে পান । —কই, দেখি কেমন সব খেয়েছে ? বেশ লক্ষ্মী ছেলে। এই-নাও চা, এই-নাও পান । বিপিন হাসিয়া বলিল, ভারী খিদে পেয়েছিল, সত্যি বলছি। আঃ, চা-টুকু যে কি চমৎকার লাগছে ? মানী বলিল, মুখ দেখে বুঝতে পারি বিপিনদী। তোমার যে অনেকক্ষণ খাওয়া হয়নি, তা যদি তোমার মুখ দেখে বুঝতে না পারলুম, তবে আবার মেয়েমানুষ কি ? —দাড়িয়ে কেন, ব’স ওই চেয়ারখানায়। ভাল কথা, মেসোমশাই তো এখনও এলেন না ? —বাবা বলে গিয়েছিলেন কাজ সারতে পারলে আজ আসবেন নয়তো কাল আসবেন। বোধ হয় আজ এলেন না, এলে এতক্ষণ আসতেন । ওঃ, এত কথা মানীর পেটে ছিল ! মানী জানিত যে বাবা আজ ফিরিবেন না, তাই সে নিশ্চিন্ত মনে চা ও খাবার করিতে গিয়াছিল। আর মূখ্য সে ছটফট কলিয়া মরিতেছে!