পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8b বিভূতি-রচনাবলী —তাতেই তো তোর স্ববিধে, যা খুশি বলবি, ধরবার লোক নেই। মানী মুখে কাপড় দিয়া গিল খিল করিয়া হাসিয়া বলিল, ওমা, কি দুই বুদ্ধি। —ত বল একটা শুনি । -শুনবে ? তবে শোন। দাড়াও, কেউ আসছে কি না দেখে আসি, আবার বাইরের ঘরে দাড়িয়ে কবিতা বলছি শুনলে কে কি মনে করবে ! একটু পরে ফিরিয়া আসিয়া মানী স্কুলের ছাত্রীর কবিতা আবৃত্তির ভঙ্গিতে দাড়াইয়া শুরু করিল— অত চুপি চুপি কেন কথা কও, ও গো মরণ হে মোর মরণ!” বিপিন হাসিয়া গড়াইয় পড়ে আর কি ! মানীর কি চোখ মুখের ভাব, কি হাত-প। নাড়ার কায়দা! যেন থিয়েটারের অ্যাকৃটো করিতেছে। অথচ হাসিবার জো নাই, মুখ বুজিয়া বসিয়া থাকিতে হইবে শাস্ত ছেলেটির মত। এমন বিপদেও মানুষ পড়ে । মানীটা চিরদিনই একটু ছিটগ্ৰস্ত । কিন্তু খানিকট পরে মানীর আবৃত্তি বিপিনের বড় অদ্ভুত লাগিতে লাগিল – “ঘবে বিবাহে চলিলা বিলোচন, ও গো মরণ হে মোর মরণ !’ এই জায়গাটাতে যখন মানী আসিয়া পৌছিয়াছে, তখন বিপিনের হাসিবার প্রবৃত্তি আর নাই, সে তখন আগ্রহের সঙ্গে মানীর মুখের দিকে চাহিয়৷ রহিল। বা, বেশ লাগিতেছে তো পদ্যটা । মানী কি চমৎকার বলিতেছে! অল্পক্ষণের জন্য মানী বদলাইয়া গিয়াছে, তাহার চোখে মুখে অন্য এক রকমের ভাব। কবিতা ষে এমন ভাবে বলা যাইতে পারে, তাহা সে জানিত না, কখনও শোনে নাই। —বাঃ, বেশ, খাস । চমৎকার বলতে পারিস তো ? মানী যেন একটু হাপাইতেছে। নিশ্বাস ঘন ঘন পড়িতেছে, বড় কষ্ট হয় পষ্ঠ আবৃত্তি করিতে, বিশেষত অমনি হাত-পা নাড়িয়া। ভারী স্বন্দর দেখাইতেছে মানীকে। মুখে বিন্দু বিষ্ণু ৰাম জমিয়াছে, একটু রাঙা হইয়াছে মুখ, বুক ঈষৎ উঠিতেছে নামিতেছে। এ যেন মানীর অন্ত রূপ, এ রূপে কখনও সে মানীকে দেখে নাই। —নেবু থাবে বিপিনদা ? —কি নেৰু? —কমলানেৰু, সেদিন কলকাতা থেকে এক টুকরি এসেছে। দাড়াও, নিয়ে আসি । —বাস নি মানী, তুই চ'লে গেলে আমার নেবু ভাল লাগবে না। মানী যাইতে উম্ভত হইয়াছিল, ফিরিয়া দাড়াইয়া বলিল, বাজে কথা ব’ল ন৷ বিপিনদ্ধা । বিপিন হতবুদ্ধি হইয়া বলিল, বাজে কথা কি বললাম ? —বাজে কথা ছাড়া কি ? যাক, দাড়াও, লেবু আনি। মানী একটু পরে দুইটি বড় বড় কমলালেবু ছাড়াইয়া একটা চায়ের পিরিচে আনিয়া যখন