পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२८ e বিভূতি-রচনাবলী জিজ্ঞাসা করেন, তখন সে কি জবাব দিবে ? তাহার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করিয়া চলিয়া আসিয়াছে—একথা বলিতে পারিবে না ! বিপিন ঠিক করিল, আর একটু অপেক্ষা করিয়া সে দেখিবে অনাদিবাৰু আসেন কিনা। দেখিয়া যাওয়াই ভাল। বাড়ীর মধ্যে মানীর মায়ের কাছে টাকা দেওয়া চলে না, তিনি জিজ্ঞাসা করিবেন এত রাত্রে সে না থাইয়া কেন কাছারি ফিরিবে। যাইতে দিবেন না, পীড়াপীড়ি করিবেন। সব দিকেই বিপদ । মানী কেন ও কথা বলিল ? বডড হেঁয়ালির ধরণের কথাবার্তা বলে আজকাল। কি গৃঢ় অর্থ না জানি উহার মধ্যে নিহিত আছে! অাছে থাকুক, গৃঢ় অর্থ মাথায় থাকুক, সে এখন চলিয়া যাইতে পারিলে বঁাচে । কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়াও অনাদিবাবু আসিলেন না। রাত নয়টা বাজিয়া গেল, পল্লীগ্রামে ইহারই মধ্যে খাওয়া-দাওয়া চুকিয়া যায়। একবার খামহরি চাকর আসিয়া বলিল, মা ব’লে পাঠালেন আপনি একা খেয়ে নেবেন, না বাবু এলে খাবেন ? বিশিন বলিল, বলগে বাবু এলে খাব এখন একসঙ্গে। কিন্তু রাত দশটা বাজিয়া গেল, তখনও অনাদিবাবুর দেখা নাই। অগত্যা সে বাড়ীর মধ্যে একাই থাইতে গেল। মানীর মা পরিবেশন করিতেছিলেন, মানী সেখানে নাই। বিপিনের মন ভাল ছিল না, সে অন্যমনস্কভাবে তাড়াতাড়ি খাইতে লাগিল । যেন খাওয়া শেষ করিতে পারিলে বাচে। মানীর মা বলিলেন, বিপিন, টাকাকড়ি কিছু এনেছ নাকি ? –আঞ্জে হ্যা মাসিম, মেসোমশাই তো এলেন না রাণাঘাট থেকে, আমি কাল খুব ভোরে চলে যাব ধোপাখালি কাছারি। টাকা আপনি নিয়ে রাখুন। খেয়ে উঠে আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। —কাল সকালেই কাছারি যাবে কেন ? কৰ্ত্তার সঙ্গে দেখা ক'রে যাবে না ? তিনি বলেই গিয়েছিলেন, আজ যদি না আসেন, কাল নিশ্চয়ই আসবেন সকাল আটটার মধ্যে। —আমার থাকা হবে না মাসিম, কাজ আছে। —কাল জামাই আসবেন মানীকে নিতে, এদিকে দেখ বাবা, মেয়ে কি হয়েছে সন্ধ্যের পর থেকে । ওপরে শুয়ে আছে, খায়নি দায়নি। ওর আবার কি যে হ’ল ! এদিকে কর্তা নেই বাড়ী, তুমি যাচ্ছ চ’লে, আমি আথান্তরে পড়ে যাব তা হ’লে । বিপিন ভাতের গ্রাস হাতে তুলিয়াছিল, মুখে না দিয়া সেই অবস্থাতেই মানীর মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া কথাটা শুনিতেছিল। কথা শেষ হইতে বলিল, কি হয়েছে মানীর ? —কি হয়েছে কি জানি বাবা। দুবার ওপরে গেলাম, বালিশে মুখ গুজে প’ড়ে আছে, উঠলও না। বললে, আমার শরীর ভাল না, রাত্তিরে খাব না কিছু। বললুম, একটু গরম দুধ খাবি ? বললে তাও খাবে না। কি জানি বাবা, কিছুই বুঝলুম না। একালের ধাতের মেয়ে, ওদের কথা আদ্ধেক থাকে পেটে, আদ্ধেক মুখে, কি হয়েছে না হয় বল, তাও বলবে না ।