পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার Ꮈ↑ d নিজের চোখে কিছু দেখেছ ? —কত দিন। তোমাকে বললেই তুমি রেগে যাবে বলে কিছু বলিনি—মাকে বলে কি হবে—বলা না বলা দুই সমান । –আচ্ছা থাক। বীণাকে একবার ডেকে দাও—আমি তাকে একটা কথা বলি। তুমি এ ঘর থেকে ষাও । কিন্তু মনোরম ঘর হইতে চলিয়া গেলেও বীণার আসিতে বিলম্ব হইতে লাগিল। এ ব্যাপার লইয়া সে কি বলিবে ? বীণা তাহার ছোট বোন। কখনও তাহাকে সে রূঢ় কথা জীবনে বলে নাই—বিশেষ করিয়া বীণা বিধবা হুইবার পরে বিপিন সাধ্যমত চেষ্টা করে ছেলেমানুষ বীণাকে কি করিয়া একটুখানি স্বধী করা যায়। বিপিন ভাবিতে লাগিল— বীণার দোষ কি ? অল্প বয়সে বিধবা । ওর মনের কোন সাধই বা পুরেছে ? পটলকে হয়তে ওর চোখে ভাল জেগেছে—সম্পূর্ণ সম্ভব। ছেলেবেল থেকেই পটলের সঙ্গে ওর ভাব ছিল, আর কেউ না জামুক, আমি জানি । যদি পটলের সঙ্গে দুটো কথা কয়ে ওর তৃপ্তি হয় —ভা আমি বারণ করি বা কি ভাবে ।--তবে বীণা ছেলেমানুষ, সংসারের কি-ই বা জানে! কত বিপদ আছে কত দিকে, সে কি তার খবর রাখে ? না—আমার কাজ নয়। মনোরমাকে দিয়ে বলাতে হবে। হঠাৎ তাহার মনে আসিল মানীর কথা। সেও তো এই রকম ছেলেবেলার বন্ধুত্ব। মানী বিবাহিত, তার স্বামী শিক্ষিত, মাজ্জিত, ভদ্র যুবক। তবে মানী কেন তাহার সহিত কথা বলিতে আসে ? কেন তাহাকে দেখিবার জন্য মানীর এত আগ্রহ ? এসব কথার কোন মীমাংসা নাই। মীমাংসা হয় না। এই ষে সে আজ বাড়ী অাসিয়াছে —সীরা পথ, সারা ট্রেনে কাহার কথা সে ভাবিয়াছে ? নিজের মনকে চোখ ঠারা চলে না । ছেলেমানুষ বীণাকে সে কি দোষ দিবে ? তাহার বাবা কি করিয়াছিলেন ? যাক ওসব কথা। মনোরমাকে দিয়া বীণাকে বলাইতে হইবে । গ্রামে কোন কুৎসা রটে বীণার নামে —তাহা কখনই হইতে দেওয়া চলিবে না। আবখ্যক হইলে বীণাকে এখান হইতে সরাইয়া ধোপাখালি কাছারিতে নিজের কাছে কিছুদিন না হয় রাখিবে। এই সময় বীণা ঘরে ঢুকিয়া বলিল-ডাকছিলে দাদা ? বিপিন চোখ তুলিয়া বীণার দিকে চাহিল। অনেক দিন ভাল করিয়া সে বীণাকে দেখে নাই। বীণার মুখশ্ৰী আজকাল এত সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে! কি স্বন্দর দেখিতে হইয়াছে বীণা ! চোখ দুটি যেমন ডাগর, তেমনি স্নিগ্ধ। মুখখানি এখনও ছেলেমামুষের মতই । এ চোখে ও মুখে কোন পাপ থাকিতে পারে ? বিপিন বলিল—বলাই কোথায় ? —ছোড়দা মাছ ধরতে গিয়েছে।