পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३ (१७ বিভূতি-রচনাবলী —তোর শরীর ভাল আছে তো ? —ই্যা। তুমি হঠাৎ চলে এলে যে ? —এমনি। রাণাঘাটে এসেছিলাম কাজে—ভাবলুম একবার বাড়ী ঘুরে যাই। হ্যা, মা কোথায় ? —ম বড়ির ডাল ধুতে গিয়েছেন পুকুরের ঘাটে। ডেকে আনবো ? —থাক এখন ডাকার দরকার নেই, তোর সঙ্গে একটা কথা ছিল। —কি বল না ? —তুই পটলের সঙ্গে বেশ মেলামেশা করিস নে। গায়ে ওতে পাচরকম কথা উঠছে —আমরা গরীব লোক, আমাদের পক্ষে সেটা ভাল নয় । বিপিন কথাটা মরীয়া হইয়া বলিয়াই ফেলিল । সঙ্গে সঙ্গে ইহাও লক্ষ্য না করিয়া পারিল না, পটলের কথা বলিতেই বীণার চোখ মুখের ভাব যেন কেমন হইয়। গেল—যে ভাব সে বীণার মুখে-চোখে কখনও দেখে নাই। মনোরমার কথা তাহা হইলে মিথ্যা নয়—নিবারণ মুখুজেও বাজে কথা বলেন নাই। পূৰ্ব্বে হইলে হয় তো বিপিন বীণার এ পরিবর্তন লক্ষ্য করিত না-কিন্তু গত কয়েক মাসের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফলে বিপিন এসব লক্ষণ বুঝিতে পারে এখন। বীণা কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে যেন সামলাইয়া লইয়া সহজ ভাবেই বলিল—ষা বলে দাদা। পটল-দল আসে, কথাবার্তা বলে—তাই বলি। না হয় আর বলবো না। বিপিন বুঝিল ইহা মিথ্যা আশ্বাস। বীণা ছলনা করিতেছে—পটলের সঙ্গে তাহার কিছুই নাই, ইহা সে দেখাইতে চায়—আর একটি খারাপ লক্ষণ । ছেলেমানুষ বীণা ভাবিয়াছে ইহাতেই দাদার চোখে ধূলা দেওয়া যাইবে- যাইতও যদি মানীর সঙ্গে পলাশপুরের বাড়ীতে তাহার দেখা না হইত। ইহা ঠিকই যে বীণা মিথ্যা কথা বলিতেছে। পটলের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তা সে বন্ধ করিবে না। লুকাইয়া দেখা করিবার চেষ্টা করিবে। বিপিন বুঝিল, সে বীণা আর নাই, তাহার ছোট বোন সরলা ছেলেমাহুষ বীণা এ নয়, এ প্ৰেমমুগ্ধা তরুণী নারী, প্রেমিকের সহিত মিশিবার স্ববিধা খুজিতে সব রকম ছলনা এ অবলম্বন করিবে। সহোদরা বটে, কিন্তু বীণাকে আর বিশ্বাস নাই। বীণা দূরে সরিয়া গিয়াছে। বিপিন তবুও হাল ছাড়িল না। বীণাকে কাছে বসাইয়া তাহাঙ্গের বংশের পূর্ব গৌরব সবিস্তারে বর্ণনা করিল। গ্রাম্য কুৎসা যে ভয়ানক জিনিস, তাহাতে একটি গৃহস্থের ভবিষ্যৎ কি ভাবে নষ্ট হইয়। যাইতে পারে, দু একটা কাল্পনিক দৃষ্টান্ত দিয়া তাহা বুঝাইবার চেষ্ট৷ করিল। বীণা খানিকক্ষণ মন দিয়া শুনিল –কিন্তু ক্রমশঃ সে যেন অধীর হইয়া পড়িতেছে, ছ একবার উঠিবার চেষ্টা করিয়াও সে সাহস পাইতেছে না—দাদার সম্মুখ হইতে চলিয়া যাইতে পারিলে যেন বঁাচে—এরূপ ভাব তাহার চোখে মুখে ফুটিয়া উঠিয়াছে।