পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q এই সময়ে বঙ্গাই আসিয়া পড়াতে বিপিনের বক্তৃতা আপন আপনিই বন্ধ হইয়া গেল । বলাই ঘরে ঢুকিয়া বলিল—দাদা, কখন এলে ? মাছ ধরে এনেছি দেখবে এস—মস্ত একটা শোল মাছ আর দুটো ছোট ছোট বান— বিপিন বলাইয়ের চেহারা দেখিয়া চমকিয়া উঠিল। মুখ আরও ফুলিয়াছে, শরীরে রক্ত নাই—পায়ের পাতা বেরিবেরি রোগীর মত দেখিতে, চোখের কোপ সাদা । অথচ এই চেহারা লইয়া বলাই দিব্য মনের আনন্দে মাছ ধরিয়া বেড়াইতেছে, খাওয়া-দাওয়া করিতেছে। ভগবান এ কি করিলেন ? চারিদিক হইতে তাহার জীবনে বিপদ ঘনাইয়া আসিতেছে, তাহা বুঝিতে বাকি নাই। বলাই বাচিবে না। নেফ্রাইটিসের রোগীর শেষ অবস্থা তাহার চেহারায় পরিস্ফুট—অথচ সে সম্পূর্ণ নিশ্চিস্ত আছে তাহার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে। বিপিন বলাইকে কিছু বলিল না। বলিয়া কোন ফল নাই—যেমন বীণাকে বলিয়া কোন ফল নাই। কেহই তাহার কথা শুনিবে না । সে চাকুরি করিতে বাহির হইলেই উহারা যাহা খুশী তাহাই করিবে। এ জগতে কেহ কাহারও কথা শোনে না—সবাই স্বার্থপর, যাহার যাহা ভাল লাগে—সে তাহাই করে, অন্ত কারো মুখের দিকে চাহিবার অবসর তখন তাহাঙ্গের বড় একটা থাকে না। সে নিজে সারাজীবন তাহাই করিয়ু আসিয়াছে—এখনও করিতেছে—অপরের দোষ দিয়া লাভ কি ? দুপুরের পর সে নিজের ঘরে বিশ্রাম করিতেছে, মনোরম ঘরে ঢুকিয়া বলিঙ্গ— ঘুমুলে নাকি ? —না ঘুমুই নি। বসে। মনোরমা বিছানার এক কোণে বিপিনের মাথার কাছে বসিল। একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিল—বীণাকে বল্পে কিছু নাকি ? —বলেছি । —ও কি বল্পে ? —বল্পে, পটলের সঙ্গে আর কথা বলবে না । —একটা কথা বলি শোন। ওরকম করলে হবে না কিছু। বীণা ঠাকুরবি বাই বলুক, পটলের সঙ্গে দেখা না করে পারবে না । তুমি বাড়ী থেকে বেরুতে বা দেরি। তার চেয়ে এক কাজ করো, পটলকে একবার বলে যাও কথাটা । ওকে ভয় দেখাও, বাড়ী আসতে বারণ করে যাও—তাতে কাজ হবে । বুঝলে আমার কথা ? বিপিন মনে মনে মনোরমার বুদ্ধির প্রশংসা না করিয়া পারিল মা। মেয়েমাহুষের মন সে অনেক বেশি বোঝে তাহার নিজের চেয়ে। মনোরম আবার বলিল—না হয় পাড়ায় পাঁচজনকে ডেকে তাদের সামনে পটলকে ছুকথা বল। এ বাড়ী আসতে মান করে দাও । তাতে দুকাজই হবে। গায়ের লোক বি. র. ৬—১৭