পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার Rఆ6 এই যে ছুদিন সে পটন্স-জার সঙ্গে ইচ্ছা করিয়াই দেখা করিল না, পটল-জ কি ভাবে লইয়াছে জিনিসটা ? খুব চটিয়াছে কি ? কিংবা হয়ত তাহার কথা লইয়া পটল-জ আর মাথা ঘামায় না। তাহাকে মন হইতে দূর করিয়া দিয়াছে। দিয়া যদি থাকে, খুব বুদ্ধিমানের মত কাজ করিয়াছে। পটল-দা কষ্ট পায়, তাহা বীণা চায় না। ভুলিয়া ধাকৃ, সেই ভালো। মনে রাখিয়া যখন কষ্ট পাওয়া, ভুলিয়া যাওয়াই ভালো । দুপুরে এ কথা ভাবিয়া বীণা দেখিয়াছে বেলা যত পড়ে সেই কথাই মনের মধ্যে কেমন একটা—ঠিক বেদনা বা কষ্ট বলা হয়তো চলিবে ন—কিন্তু কেমন একটা কি হয় ঠিক বলিয়া বোঝানো কঠিন—কি বলিয়। বুঝাইবে সে ভাবটা ?... যাহোক, যখন সেটা হয়, বিশেষতঃ সন্ধ্যার দিকে, যখন বড় তেঁতুল গাছটায় কালো কালো বাদুড়ের দল বাক বাধিয়া ফেরে, সস্তুদের নারকেল গাছটার মাথায় একটা নক্ষত্র ওঠে, বৌদি সাজালের মালস হাতে গোয়ালঘরে সাজাল দিতে ঢোকে, একটু পরেই ঘুটের ধোয়ায় উঠানের পাতিলেবুতলাটা অন্ধকার হইয়া যায়,—তখন ছাদের ওপর একা দাড়াইয়া বঁাশঝাড়ের মাথার দিকে চাহিয়া চাহিয়া বীণার যেন কান্না আসে-“কোথাও কিছু যেন নাই কোথাও কিছু নাই.. এ ভাবটা সে বেশীক্ষণ মনে থাকিতে দেয় নী—তখনি তাড়াতাড়ি ছাদ হইতে নীচে নামিয়া আসে। নিজের কান্নাতে নিজে লজ্জিত হয়, ভীত হয়। অথচ কাহাকেও কিছু বলিবার উপায় নাই। কাহারও নিকট একটু সাত্বনা পাইবার উপায় নাই। মা নয়, বৌদিদি নয়। কাহারও কাছে কিছু বলা চলিবে না, বীণা বোঝে। -এ তার নিজস্ব কষ্ট, অত্যন্ত গোপন জিনিস-গোপনেই সহ করিতে হইবে। হঠাৎ এ সময় পটলদাকে এ ভাবে দেখিয়া বীণা যেন কেমন হইয়া গেল। তাহার মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না। পটল গাছের গুড়িটার দিকে আর একটু হটিয়া গেল। বীণার দিকে চাহিয়া একটু হাসিয়া বলিল - বীণা, আমার ওপর তোমার রাগ কিসের ? বীণা এবার কথা খুজিয়া পাইল। বলিল—রাগ কে বল্পে ? —দুদিন তোমাদের বাড়ী গেলাম, বাইরে এলে না, দেখা করলে না—রাগ নয়তো কি ? --রাগ নয় এমনি । কাজে ব্যস্ত ছিলাম। — মিথ্যে কথা। কাজে ব্যস্ত থাকলেও একটু বাইরে আসা যায় না কি ? না সত্যি বলে লক্ষ্মীটি, আমি কি দোষ করেছি ? —তুমি পাগল নাকি পটল-জা ? আচ্ছ, সন্ধ্যাবেলায় এখানে এসেছ আবার, লোকে দেখলে কি মনে করবে—তোমায় একদিন বারণ করে দিইছি মনে নেই! যাও বাড়ী যাও— বীণা কথাটা বলিল বটে—কিন্তু তাহার মনের মধ্যে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ধরণের আনন্দ আসিয়া জুটিয়াছে—সন্ধ্যার অন্ধকার অদ্ভূত হইয়া উঠিয়াছে, জোনাকীজলা অন্ধকার, সাজালের ঘুটের চোখ-জাল-করা ধোয়ায় ঘনীভূত অন্ধকার।" তাকে কেহ চায় নাই জীবনে এমন করিয়া-সে কথা কহে নাই বলিয়া ছটিয়া আশশেওড়া