পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૧ ના বিভূতি-রচনাবলী ফিরিবার পূর্বেই দুজনে খুব বন্ধুত্ব হইয়া গেল। দুজনের কেহই বুঝিতে পারিল না, পরস্পরকে তাহারা বুঝিয়া ফেলিয়াছে কি না। ס\ হাটতলায় বিপিনকে রোগীর আশায় বসিয়া থাকিতে হয় প্রায় সারাদিনই। রোগী যদি আসিত, তবে চুপ করিয়া নিষ্কৰ্ম্ম বসিয়া থাকিবার কষ্ট হয়তো পোষাইত, কিন্তু রোগী আসে না । প্রথম মাস দুই রোগী হইয়াছিল, যদু ডাক্তারও কয়েকটি জায়গায় পরামর্শ করিবার জন্য তাহাকে ডাকাইয়া লইয়া গিয়াছিল, প্রথম মাসে কুড়ি এবং দ্বিতীয় মাসে পয়ত্রিশ টাকা আয় হইবার পরে বিপিনের মনে নতুন আশা, আনন্দ ও উৎসাহের সঞ্চার হইয়াছিল। পাচ টাকা ব্যয় করিয়া সে কলিকাতা হইতে ডাকে একখানা বাংলা ‘জর-চিকিৎসা’ বলিয়া বই আনাইল। ভারি উপকার হইল বইখানি পড়িয়া । বন্ধু ডাক্তারের ইচ্ছা ছিল তাহাকে দিয়া অস্লারের বিখ্যাত বইখানা কেনাইবে । বিপিন বলিতে পারে না যে সে ইংরাজি এমন কিছু জানে না যাহাতে করিয়া সে অস্লারের বই বুঝিতে পারে। স্বতরাং সে কোনোরূপে এড়াইয়া পাশ কাটাইয়া চলিতে লাগিল। তৃতীয় মাস হইতে কেন যে দুরবস্থা ঘটিল, তাহ সে বোঝে না। • প্রথম দুই সপ্তাহ তো শুধু বসিয়া। কে একজন এক ডোজ ক্যাস্টর অয়েল লইয়া গিয়াছিল, দুই সপ্তাহের মধ্যে সে-ই একমাত্র রোগী ও খরিদার। মুীর-দোকানে বাকী পড়িতে লাগিল, ডাক্তারবাবু বলিয়া খাতির করে তাই ধারে জিনিস দেয়, নতুবা কি বিপদেই পড়িতে হইত ! একদিন চুপ করিয়া বসিয়া আছে, প্রায় সন্ধ্যার সময় একজন লোক বিপিনের ডাক্তারখানার চালাঘরের সামনে দাড়াইয়া বলিল, এইটে কি ডাক্তারখানা ? বিপিনের বুকের মধ্যে কেমন করিয়া উঠিল । —হ্যা, হ্যা, এলো, কোখেকে আসচে। বাপু ? —আপুনিই ডাক্তারবাৰু ? পেলাম হই। আপনাকে যাতি হবে নরোত্তমপুর। বহুবাৰু ডাক্তার চিঠি দিয়েছেন, এই নিন। লোকটা একটা চিরকুট কাগজ বিপিনের হাতে দিল । বিপিন পড়িয়া দেখিল কলেরার রোগী, যজু ডাক্তার লিখিয়াছে তাহার স্যালাইন দিবার তোড়জোড় নাই, বিপিনকে সে সব লইয়া শীঘ্ৰ আসিতে। বিলম্ব করিলে রোগী বাচিবে না। তালাইন দিবার তোড়জোড় বিপিনেরও নাই। কিন্তু বিপিন একটা ব্যাপার বুঝিয়া ঠিক করিয়া লইল । জলে লবণ গুলিয়া শিরার মধ্যে ঢুকাইয়া দিতে বেশী বেগ পাইতে হইবে না। চিকিৎসা করিবার সাহস আছে বিপিনের। সে বাহির হইয়া পড়িল ।