পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵ-8 বিভূতি-রচনাবলী খাওয়ার পর বিপিন বাহিরে যাইতে যাইতে দালানের পাশে জানালার দিকে চাহিল— মানী দাড়াইয়া আছে ? কেহ নাই। রোজ তাহার খাওয়ার পরে বাহিরে যাইবার পথে এইরূপ জানালার ধারে সে দাড়াইয়। থাকিত। কি ছাইভস্ম সে ভাবিতেছে । এটা কি মানীদের বাড়ী যে মানী দাড়াইয়া থাকিবে জানালায় ? বাহিরে সে একাই আসিয়। তামাক খাইতে বসিল । বেশ অন্ধকার রাত্রি। উঠানের নারিকেল গাছের মাথায় জট পাকানো অন্ধকার কিন্তু ক্রমশঃ স্বচ্ছ তরল হইয়। উঠতেছে পূৰ্ব্ব দিগন্তে চাদ উঠিবার সময় হইল বোধ হয়। গোলার পাশে হামু হানার ঝাড় হইতে অতি উগ্র স্বগন্ধ ভাসিয়া আসিতেছে। এমন রাত্রে ঘুম হয় ? শুধুই বসিয়া ভাবিতে ইচ্ছ করে। আর কি কখনও তাহার সঙ্গে দেখা হইবে না ? অাজ ষে ডাক্তার হিসাবে তাহার এত খাতিরষত্ব, লোকমুখে এত স্থখ্যাতি, এ সব কাহার দৌলতে ? ষে তাহাকে এ পথ দেখাইয়া দিয়াছিল সে আজ কোথায় ? অাজ বিশেষ করিয়৷ ইহাদের বাড়ীর এই জামাই আসার ব্যাপারে মানীদের বাড়ীর তিন বৎসর পূর্বের সে ঘটন, তাহার বিশেষ করিয়া মনে পড়িয়াছে। এমন এক দিনেই মানীর সঙ্গে তাহার আলাপ হয় আবার নূতন করিয় , বাল্যের দিনগুলির অনেক, অনেক পরে। মানীর জন্য এত মন-কেমন করে কেন ? বিপিন কত রাত্রি পর্য্যস্ত জাগিয়া বসিয়া রহিল। সে আরও বড় হইবে। ভাল করিয়া ভাক্তারি শিখিবে। মানীর যে দেওর বীজপুরে থাকিয় ডাক্তারি করে, তাহার কাছে গেলে কেমন হয় ? বিপিন নিজের মধ্যে একটা অদ্ভুত শক্তি অনুভব করে। সে ডাক্তারি খুব ভাল বোঝে। এ কাজে তাহার ঈশ্বরদত্ত স্বাভাবিক ক্ষমত। আছে। কিন্তু আরও ভাল করিয়া শেখ চাই জিনিসট। ভাবিতে ভাবিতে কখন সে ঘুমাইয়া পড়িল । শেষরাত্রে বিপিন স্বপ্ন দেখিল মানী আসিয়াছে। হাসিমুখে তাহার দিকে চাহিয়া বলিতেছে, পোলাও কেমন খেলে বিপিনদ। তোমার জন্তে আমি নিজের হাতে—ভাল লাগল ? ঠিক তেমনি হাসি, সেই স্বপরিচিত, অতি প্রিয় মুখ ! বিপিন বলিল, আমি মরে যাচ্ছি মানী, তোকে দেখতে না পেয়ে। তুই আমায় বাচ, আমায় ডাক্তারি শেখাবি নে বীজপুরে তোর দেওরের কাছে ? খুব ভোরে বিপিন হাত মুখ ধুইয়া সবে চণ্ডীমণ্ডপে এক ছিলিম তামাক সাজিয়া বসিয়াছে,