পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२२ বিভূতি-রচনাবলী মেয়েটি দেখিতে ভালই, মুখশ্ৰীও বেশ । এই নিঃসঙ্গ প্রবাস-জীবনে এমন একটি স্নেহপরায়ণ নারীর সান্নিধ্য পাওয়া সত্যই ভাগ্যের কথা. বৈকালে সে নদীর ধার হইতে বেড়াইয়া আসিয়া চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়াছে, মেয়েটি আসিয়া বলিল, চা খাবেন ? বার বার তাহাকে খাটাইতে বিপিনের কুষ্ঠা হইল । সে বলিল, না থাক। একটা পান বরং— পান তো আনবই, চা-ও আনি । আপনি লজ্জা করেন কেন, চা তো আপনি খান— বললেই তৈরি করে দিই। মিনিট কুড়ি পরে বিপিন চা খাইভে থাইতে মেয়েটির সঙ্গে কথাবার্তা বলিতেছিল। অত্যন্ত ইচ্ছা হইতে লাগিল, ইহার কাছে মানীর কথা বলিবার জন্য। এর মন সহানুভূতিতে ভর, এ তাহার মনের কষ্ট বুঝিবে । বলিয়াও মুখ। ইচ্ছা হইল বলে- শোন শান্তি, তোমার মত একটি মেয়ের সঙ্গে আমার খুব আলাপ । সে আমাকে খুব ভালবাসে, তোমার মতই করুণাময়ী, মমতাময়ী সে। আজ তোমার সেবাযত্ন দেখে তার কথা কত মনে হচ্ছে জান শান্তি ? শাস্তি বলিবে, বলুন না তার কথা, বড় শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে - তারপর চোখে আগ্রহভরা দৃষ্ট লইয়া শাস্তি তাহার সামনে বসিয়া পড়িবে, আর সে মানীর সহিত তাহার বল্যের পরিচয়ের কাহিনী হইতে আরম্ভ করিয়া তাহার সহিত শেষ সাক্ষাতের দিন পর্য্যন্ত সব কথা বলিয়া যাইবে । বৈকাল উত্তীর্ণ হইয়া সন্ধ্যা নামিবে, সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়া নামিবে জ্যোৎস্নারাত্রি, বাশবনের মাথায় জ্যোৎস্নালোকিত আকাশে দু'দশটা নক্ষত্র উঠিবে, গাছপালা হইতে টপ টপ করিয়া শিশির ঝরিয়া পড়িবে, গ্রাম নিযুতি নিন্তব্ধ হইয়া যাইবে, ডোবার ধারের জগডুমুর গাছের খোড়লে রোজকার মত লক্ষ্মীপেঁচাটা ডাকিবে, তখনও শাস্তি গালে হাত দিয়া তন্ময় হইয়া এই অপূৰ্ব্ব কাহিনী শুনিয়া যাইতেছে ও মাঝে মাঝে আর্দ্র চক্ষু আঁচল দিয়া মুছিতেছে, আর সে অনবরত বলিয়াই চলিয়াছে—তবুও হয়তো বলা শেষ হইবে না, হয়তো বা বলিতে বলিতে পূবে ফরসা হইয়া যাইবে, কাক কোকিল ডাকিয়া উঠিবে, ভোরের ফুয়াসায় মাংলার ধারের আম-শিমুলের বাগান অস্পষ্ট দেখাইবে, অথচ শাস্তি উঠিবে না, শেষ পৰ্য্যন্ত ঠায় বসিয়া শুনিবে। একথা বলা যায় কার কাছে ? যে মন দিয়া শোনে, যে ভালবাসে, সহায়ভূতি দেখায়— যার মনে স্নেহ আছে, দয়া আছে, মায়া আছে। সে বুঝিবে, অন্তে কি বুঝিবে ? তেমনি মেয়ে এই শান্তি । কোন দূর নক্ষত্রের দেবলোক হইতে শাস্তির মত মেয়ের, মানীর মত মেয়েরা, পৃথিবীতে জন্ম নেয় | চা খাওয়া হইলে শাস্তি পান আনিল । বিপিন বলিল, তুমি এখানে আর কতদিন থাকবে শাস্তি ? –এ মাসটা আছি ।