পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇపె8 বিভূতি-রচনাবলী ইহা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও সহজলভ্য জিনিস -বিধবা হইয়া পৰ্যন্ত এই বৈচিত্র্যহীন স্বস্তি সে বরাবর ইস্তকনাগাং পাইয়া আসিয়াছে—ইহার মধ্যে কিছু নূতনত্ব নাই। নূতনত্ব ও বৈচিত্র্য যাহার মধ্যে ছিল, তাহার নিকট হইতে দূরে সরিয়া গিয়াছে। খুব অল্পদিনের জন্য —কতদিন ? বছর দুই ? হুঁ, প্রায় দুই বছরের জন্য তাহার, জীবনে এই অনাস্বাদিতপূৰ্ব্ব বৈচিত্র্য দেখা দিয়াছিল। পটলদা তাহদের বাড়ীতে আসে—অাপিত, মায়ের সঙ্গে কি বলাইয়ের সঙ্গে গল্প করিয়া হয়তো বা একটা পান কিংবা একগ্লাস জল, কখনো বা দুইই, চাহিয়া খাইয়া চলিয়া যাইত । মায়ের ডাকে বীণাই পান জল অনিয়া দিত – কেননা মনোরম ঘরের বউ, স্বামীর বন্ধুস্থানীয় লোকের সম্মুখে বাহির হইবার নিয়ম তাহীদের সংসারে নাই । হয়তো পান দিতে আসিয়া পটল দুই একটা কথা বলিত, বীণা জবাব দিত । হয়তো পটল এক আধটা ছোটখাটে। গল্প করিল, বীণা দাড়াইয়। দাড়াইয়া শুনিত—ভাল লাগিত শুনিতে। হয়তো মা উঠিয়া যাইতেন সন্ধ্যহ্নিক করিতে – বীণা ও পটল রোয়াকে পরস্পরের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্ত। বলিত । ক্রমে পটলদা যেন একটু ঘন ঘন আসিতে আরম্ভ করিল। পটলের সাড়া পাইলে বীণারও যেন কি হয় । তাহার মন চঞ্চল হইয় উঠে, রান্নাঘরে বউদিদির কাছে বসিয়া কুট না কুটিতে, কি তেঁতুল কাটিতে, কি বাটন বাটিতে আর ভাল লাগে না। ছুটিয়া গেলে কে কি মনে করিবে, ধীরে ধীরেই যাইত --অন্য ছুতায় যাইত। – মা, আজ কি বেগুন পোড়াতে আছে ? বউদিদি বলছিল, আমি বললাম, আজ বুধবার, দাড়াও, জিগ্যেস করে আসি । —আচ্ছ। মা, পাকানে। সলতেগুলে। কুলুঙ্গিতে রেখে দিইচি, তার কি একটাও নেই— তুমি না ও নি ? -- তোমার কলসীতে জল আনতে হবে না মা ? বলে তো এখুনি আমি, আবার সন্ধ্যে হয়ে গেলে তখন— ইত্যাদি, ইত্যাদি । তারপর কে জানে আধঘণ্টা, কে জানে একঘণ্ট, সে আর পটলদা গল্পই করিতেছে, গল্পষ্ট করিতেছে । যতক্ষণ পটলদা বাড়ীতে থাকিবে বীণা নড়িতে পারিত না সেখান হইতে । ক্রমে পটলদ চাহিত একটু আড়ালে দেখা করিতে, বীণা তাহ বুঝিত। বীণার কৌতুহল তখন বেশ বাড়িয়াছে, পুরুষ মানুষ একা থাকিলে কি রকম কথাবার্তা চলে। পটলদা মজার মজার কথা বলে বটে। বীণার হাসি পায়, আনন্দও হয়। মা উপস্থিত থাকিলে পটলদা এ ধরণের কথা বলে না। হয়তো বীণার শোনা উচিত নয় এসব কথা, কিন্তু লাগে মন্দ নয় । তারপর গ্রামে কথা উঠিল, দাদা বাড়ী আসিয়া তাহাকে ডাকিয়া বুঝাইলেন, বউদিদিই