পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ९>é দাদার কানে উঠাইল এসব কথা, বলাই মারা গেল, পটলদা সন্ধার সময় ছাঁদের পাশে বাগানে অন্ধকারে লুকাইয়া দেখা করিতে শুরু করিল, তাহাও একদিন বউদিদির চোখে গেল পড়িয়— বীণার জীবনে মুখ নাই, আনন্দ নাই কোনদিক হইতে। একটুকু আলো আসিতে সৰে আরম্ভ করিয়াছে যাই—অমনি সবাই মিলিয়া হৈ হৈ করিয়া জানালা সশবে বদ্ধ করিয়া দিল । সেদিন একাদশী । বীণা সারাদিন মায়ের সঙ্গে নির্জলা একাদশী করিয়া সন্ধ্যাবেল মায়ের অনুরোধে একটু দুধ ও দুই-একটা ফল খায়। একদিন ঘরে ফলের যোগাড় ছিল না—পাড়াগাঁয়ে থাকে না— মনোরম বৈকালে বলিল, ও ঠাকুরবি, মসুর মার কাছ থেকে এক পয়সার পাকা কলা নিয়ে এসো তো ? আমি ঘাটে বলেছি ওকে। গিয়ে নিয়ে এস। বীণা এ পাড়ার সকলের বাড়ীতেই এক যাতায়াত করে—ও পাড়ায় কখনও একা যায় না। মন্থর মা থাকে এই পাড়ারই সব্ব শেষ প্রান্তে, মধ্যে পড়ে ছোট একটা আমবাগান, সেটা পূৰ্ব্বে ছিল বীণার বাবা বিনোদ চাটুজ্জের নীলাম-খরিদা সম্পত্তি, জাবার ওপাড়ার ইশ বাড়ুজে বিপিনের নিকট হইতে ক্রয় করিয়া লইয়াছেন। একটি আমগাছের নাম ‘সোনাতলী, বীণা ছেলেবেলায় এখানে জাম কুড়াইতে আপিত—যখন তাহাদের নিজেদের বাগান ছিল। যাইতে যাইতে স ভাবিল—কি চমৎকার অাম ছিল সোনাতলীর । কত বছর এ গাছের আম থাই নি -এবারে খুড়ীমাদের কাছ থেকে দুটো চেয়ে আনবো আমের সময় । হঠাৎ সে দেখিল পটলদা বাগানের পথ দিয়া বাগানে ঢুকিতেছে। বীণার বুকের রক্ত যেন টল খাইয়া উঠিল। এখন সে কি করে ? বাড়ী ফিরিয়া যাইবে ? পটলদা তাহাকে দেখিতে পায় নাই—কারণ সে বাগানের কোণাকুণি পথটা বাহিয়া বোধ হয় মুচিপাড়ার দিকে যাইতেছে। পটলদার সঙ্গে কতকাল দেখা হয় নাই । হঠাৎ বীণা নিজের অজ্ঞাতসারে ডাক দিল, ও পটলদা ? পটল চমকিয়া উঠিয়া চারিদিকে কেমন করিয়া চাহিতেছে দেখিয়া বীণার হাসি পাইল । —এই যে, ও পটলদ । পটল বিক্ষিত ও আনন্দিত মুখে কাছে আসিল। —তুমি ? কোথায় যাচ্ছ ? —যেখানেই যাই। তুমি ভাল আছ ? —তাতে তোমার কি ? আমি মরে গেলেই বা তোমার কি ? —বাজে বোকো না পটলদা। ওসব কথা বলতে নেই।