পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ২৯৭ বীণা বলিল, কোন চাল তাজব বউদি? সেদিনকের সেই মোটা নাগরা আছে। দিব্যি ফোটে—তাই ভাজি, হ্যা ? বীণার মা বলিলেন, আগে সঙ্ক্যেটা দেখা না তোরা, অন্ধকার তো হয়ে গেল মা— আর কখন— মনোরমা ভিজা কাপড় ছাড়িয়া ফস কাপড় পরিয়া উঠানের তুলসীতলায় প্রদীপ দিতে গিয়া হঠাৎ চীৎকার করিয়া উঠিল, ও ঠাকুরবি, জামায় কিসে কামড়াল, শীগগির এল— বীণা রান্নাম্বর হইতে ছুটিয়া গেল, কি হল বউদি ? সে রোয়াক হইতে উঠানে পা দিবার পূৰ্ব্বেই মনোরম আবার চীৎকার করিয়া উঠিল, সাপ | সাপ | অজগর গোখরো–গোলার পিড়ির মধ্যে, ও মা, ও ঠাকুরঝি— বীণা ততক্ষণ ছুটিয়া মনোরমার কাছে গিয়া পৌঁছিয়াছে, কিন্তু সে কিছু দেখিতে পাইল না। মনোরমা উঠানে বসিয়া পড়িয়াছে তাহার হাতের সন্ধ্যাপ্রদীপ ছিটকাইয়া উঠানে পড়িয়া তেল সলিতা ছড়াইয়া পড়িয়াছে । মনোরমা বলিল, আমার গা ঝিম্ ঝিম্ করছে ঠাকুরবি—আমার ধর । বীণার মা বলিলেন, শীগগির কেষ্ট ঠাকুরপোকে ডাক, জীবনের মাকে ডাক, ওম, আমার কি হ’ল গো যা য। শীগগির যা, হে ঠাকুর হে হরি, রক্ষে কর বাবা— বীণা বলিল, টেচিও না মা, আমি ডেকে আনছি, এখানে তার আগে দুটো বাধন দিই, গ্রামছাখানা দাও— মিনিট পনরো মধ্যে গায়ে রাষ্ট্র হইয়া গেল বিপিনের বউকে সাপে কামড়াইয়াছে এবং সঙ্গে সঙ্গে এপাড়া ওপাড়ার লোক ভাঙিয়া পড়িল বিপিনদের উঠানে। ভীম জেলে তাল ওঝা, সে আসিয়া গাটুলি করিল, মন্ত্ৰ পড়িল, ঝাড়ফুক চালাইল, মনোরম অপাড় হইয়া পড়িয়া আছে, তাহার মাথায় ঘড়া করিয়া জল ঢালা হইয়াছে, তাহার মাথার দীর্ঘ কেশরাশি জলে কাদায় লুটাইতেছে, সেদিকে তখন কাহারও লক্ষ্য করিবার অবকাশ ছিল না, রোগিণীর অবস্থা লইয়া সকলে ব্যস্ত । * কৃষ্ণলাল মুখুজে বলিলেন, সতীশ ডাক্তারের কাছে কে গেল ? ও হরিপদ, তুমি একবার সাইকেলখানা নিয়ে ছোট । পটলও আসিয়াছিল, সে ভাল সাইকেল চড়িতে জানে, বলিল, আমি যাচ্ছি কাকা । হরিপদ ভাই, তোমার সাইকেলখানা— বীণা দেখা গেল খুব শক্ত মেয়ে। সে অমন বিপদে হাত-পা হারায় নাই, ছুটাছুটি করিয়া কখনও জল, কখনও মুন, কখনও দড়ি আনিতেছে, সম্প্রতি বৌদিদির মাথাটা উঠানে লুটাইতেছে দেখিয়া সে মাথা কোলে লইয়া শিয়রের কাছে আসিয়া বসিল । বিপিন দুপুরের পূর্বেই সোনাতনপুর হইতে রওনা হইয়া হাটিয়া আসিতেছিল, বেলা ছোট, আমতলীর বাওড়ের কাছে আলিতেই অন্ধকার ঘনাইয়া আসিল ।