পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৮ বভূতি-রচনাবলী বিড়ি নাই পকেটে, ফুরাইয়া গিয়াছে, পথের পাশেই শরৎ ঘোষের মুদির দোকান। এখনও প্রায় আধক্রোশ পথ বাকী তাহদের গ্রামে পৌছিতে, বিডি কিনিতে সে দোকালে ঢুকিল । শরৎ বলিল, দাদাঠাকুর এলেন নাকি আজ ? তামাক ইচ্ছে করুন—বস্কন, বস্কন । o —না আর তামাক খাব না সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে, এক পয়সার বিড়ি দাও আমায়। —তা দিচ্ছি, দাদাঠাকুর বম্বন না । তামাকটা খেয়ে যান, এতটা হেঁটে এলেন । বিপিন তামাক খাইতে খাইতে বলিল, আখের গুডে এবার কেমন হ’ল শরৎ ? —কিছু না, কিচ্ছ না দাদাঠাকুর । পুজিপাট সব খেয়ে গেল—স’ ন’ আনা মণ কিনলাম, বেচলাম সাড়ে সাত, আট। সেদিন আর নেই দাদাঠাকুর, ডাহা লোকসান । তবে কি করি, লেখাপড় তো শিখি নি আপনাদের মত। খাই কি ক’রে বলুন ? —আইনদি চাচার খবর জান ? ভাল আছে ? —বেশ আছে, পরশু বেলতার মাঠে বিচুলি তুলতে গিয়ে দেখি বুডো দিব্যি খুঁটির মত ব’সে ধানের শাল পাহারা দিচ্ছে । —আচ্ছা, আসি শরৎ । —দাড়ান দাদাঠাকুর, পাকাটির মশাল আমার করাই আছে, একটা জেলে নিয়ে যান— ওরে, নিয়ে আয় তো গোলার তলা থেকে একটা মশাল ! ক’দিন থাকবেন বাড়ী ? —থাকব আর কই ? তিন চার দিনের বেশি— রুগীপত্তর ফেলে – সদর রাস্ত দিয়া গেলে খুব ঘুর হয় বলিয়া সে গ্রামে ঢুকিয়াই নদীর ধারের রাস্তাটা ধরিল। এ দিকটা জনহীন, শুধু বৈচিবন, নিবিড় বাশবন ও আমবাগান। সন্ধ্যার পর বাঘের ভয়ে এ পথে বড কেহ একটা হাটে না, যদি ও বাঘ নাই, কিংবা কালেভদ্রে এক আধটা কেঁদো বাঘ বাহির হইবার জনশ্রুতি শোনা যায় মাত্র । সুতরাং বিপিনের সহিত কাহারও দেখা হইল না । - বাড়ীর কাছাকাছি তfহাধের নিজেদের জমির সীমানায় ঘাটের পথের চালত গাছটার তলায় যখন সে পৌঁছিয়াছে, তখন একটা গোলমাল ও কান্নার রব তাহার কানে গেল। কোনদিক হইতে শদটা আসিতেছে ভাল ঠাহর করিতে পারিল না। একটু আশ্চৰ্য্য হইয়া চারিদিকে চাহিয়া শুনিল । এ কি ! তাহাঁদেরই বাড়ীর দিক হইতে শব্দটা অমিত্তেছে না ? তাহার বুকের ভিতরটা এক মুহূর্বে যেন ভয়ে অসাড হইয়া গেল। কি হইয়াছে তাহাদের বাড়ীতে ? না—তাহাদের বাড়ী নয়, এ যেন কেষ্ট কাকাদের কিংবা পরাণ নাপিতের বাড়ীর দিক হইতে-তাই হইবে, তাহাদের বাড়ী নয়। পরক্ষণেই সে দ্রুতপদে দুরু হুরু বক্ষে বাড়ীর দিকে প্রায় ছুটিতে ছুটিতে চলিল । আর কিছু দূর গিয়া বিপিনের আর কোলে সন্দেহ রহিল না। এ কায়ার রব যে তাহার মায়ের গলার পাগলের মত ছুটিতে ছুটিতে সে বাড়ীর পিছনের পথে আসিতেই তাহাদের