পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার చెపెs উঠানে ভিড় দেখিতে পাইল। তাহাকেও দুই চারজন দেখিয়াছিল তাহারা ছুটিয়া আসিল তাহার দিকে। সৰ্ব্বাগ্রে ছুটিয়া আসিলেন কৃষ্ণলাল মুখুজে । —এসো এসো বিপিন, বড়-বিপদ—এসো— বিপিনের গলা দিয়া যেন কথা বাহির হইতেছে না, ভয়ে ও বিস্ময়ে সে কেমন হুইয়া গিয়াছে। বলিল, কি—কি, কেষ্ট কাক, ব্যাপার কি ? ভিড়ের ভিতর হইতে বীণা কাদিয়া উঠিল, ও দাদা, শীগগির এসো, বৌদিদি যে আমাদের ছেড়ে চলে গেল গো । মনোরমা ? মনোরমার কি হইয়াছে ? বিপিন ভিড় ঠেলিয়া অগ্রসর হইবার চেষ্ট না করিয়া ফ্যাল ফ্যাল করিয়া ইহার উহার মুখের দিকে চাহিতে লাগিল। দুই তিন জন হাত ধরিয়া তাহাকে লইয়া গেল । কে একজন বলিয়া উঠিল, আহ, সতীলক্ষ্মী বউ বটে, স্বামীও একেবারে ঠিক সময়ে এসে হাজির-এদেরই বলে সতীলক্ষ্মী— বিপিন গিয়া দেখিল উঠানে তুলসীতলার কাছেই মনোরমা মাটিতে শুইয়া। মাথার চুল মাটিতে লুটাইতেছে। সারাদেহ অসাড়, নিম্পদ । বিপিন আর যেন দাড়াইতে পারিল না। বলিল, কি হয়েছে কেষ্ট কাক ? —সাপে কামড়েছিল। যাচ্ছিলেন বৌমা পিদিম দিতে নাকি তুলসীতলায়— চার পাচজন লোক একসঙ্গে ঘটনাটা বলিতে গিয়া পরস্পরকে বাধা দিতে লাগিল । বিপিনের মা তাহাকে দেখিয়া চীৎকার করিয়া কাদিতে লাগিলেন। বীণা কাদিতে লাগিল। বিপিন নাড়ী দেখিয়া বলিল, নাড়ী নেই বটে—কিন্তু কেষ্ট কাকা, এ মরে নি এখনও । বীণা, শীগগির জল গরম করে নিয়ে আয়—সতীশ ডাক্তারের কাছে একজন যা তো কেউ— বলিতে বলিতে সতীশ ডাক্তারকে লইয়া পটল আসিয়া উপস্থিত হইল। সতীশ ডাক্তার ও বিপিন দুইজনে কিছুক্ষণ দেখিল । বিপিন বলিল, আশা আছে বলে মনে হচ্ছে না কি ? ইথার ইন্‌ ক্লোরোফৰ্ম্ম দিয়ে দেখা যাকৃ নাড়ী আসে কিনা—এ রকম রোগী আমি একটা দেখেছিলাম অবিকল এই লক্ষণ । এ মরে নি এখনও । —ইথার ইন ক্লোরোফৰ্ম্ম দিয়ে কি হবে ? দ্যাখে দিয়ে— —এ মরে নি সতীশবাবু কতকটা ভয়ে, কতকটা বিষের ক্রিয়ায় এমন হয়েছে --অামার মনে হয় গোখরো সাপ নয়—এ ঠিক শেকড়চাদা সাপ- এই রকম লক্ষণ সব প্রকাশ পায়। কেউ দেখেছিল সাপটা ? বীণা বলিল, বউদিদি বলেছিল অজগর গোখরো সাপ-গোলার পিড়িতে ছিল--আমি কিছু দেখিনি অন্ধকারে -- সতীশ ডাক্তার বলিলেন, ও কিছু না, ভয়ে অনেক সময় ও রকম হয়। উনি ভয়ে তখন চারিদিকে গোখরো সাপ তো দেখবেনই। অন্ধকারে কি দেখতে কি দেখেছেন— মনোরমাকে ধরাধরি লরিয়া রোয়াকে লইয়া যাওয়া হইল।