পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসায় so wෂ• “. বিশ্বেশ্বর কিন্তু গ্রামের মধ্যে গেল না। বিলের উত্তর পাড়ে গ্রাম হইতে কিছু দূরে একটা বড় অশ্বখ গাছ। তাহার তলায় ছোট একটি চালাঘরের সামনে বিশ্বেশ্বর তাহাকে লইয়া গেল । বিপিন বলিল রুগী এখানে নাকি ? - হ্যা, আম্বন ঘরের মধ্যে। সোজা চলুন, অন্য কেউ নেই। ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া বিপিন দেখিল একটি স্ত্রীলোক, জাতিতে বাঙ্গ কিংবা দুলে, ঘরের মেজেতে পুরু বিচালির উপর ছেড়া কাথার বিছানায় শুইয়া আছে। স্ত্রীলোকটির বয়স চব্বিশ পচিশ হইবে, রং কালো, চুল রুক্ষ, হাতে কাচের চুড়ি, পরণে ময়লা শাড়ি। জরের ঘোরে রোগিণী বিছানায় এপাশ ওপাশ করিতেছে। বিপিন ভাল করিয়া পরীক্ষা করিয়া বলিল-এর নিমোনিয়া হয়েচে–ছুদিকই ধরেচে। খুব শক্ত রোগ। খুব সেবা-যত্ন দরকার। বড্ড দেরীতে ডেকেচেন আমাকে—তবুও সারাতে পারি হয়তো কিন্তু এর লোক কই ? খুব ভাল নার্সিং চাই—নইলে— বিশ্বেশ্বর হঠাৎ বিপিনের দুই হাত ধরিয়া কাদো কাদে স্বরে বলিল—বিপিনবাবু, আপনাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে রুগীকে —যে করেই হোক, আপনার হাতেই সব, আপনি দয়া করে— বিপিন দস্তুরমত বিস্মিত হইল। বিশ্বেশ্বর চক্ৰবৰ্ত্তীর এত মাথাব্যথা কিসের তাহ ভাল বুঝিতে পারিল না। এ বাগদী মাগী মরে বঁাচে তা বিশ্বেশ্বরের কি ? ইহার আপন আত্মীয়স্বজন কোথায় গেল ? বিশ্বেশ্বর বলিল—চলুন গাছতলাটার ধারে মাছরটা পেতে দি, ওখানটাতে বম্বন-তামাক সাজবো ? বিপিন গাছতলায় গিয়া বসিল । বিশ্বেশ্বর তামাক সাজিয়া আনিয়া স্তু কাটি বিপিনকে দিবার পূর্বে মলিন জামার পকেট হইতে একটা টাকা বাহির করিয়া বিপিনের হাতে দিতে গেল। বিপিন বলিল- আগে বলুন মেয়েটা কে-আপনি এর টাকা দেবেন কেন, এর লোকজন কোথায় ? বিশ্বেশ্বর বলিল—কেন, আপনি শোনেন নি কোনো কথা ? —না, কি কথা শুনবো ? বিশ্বেশ্বর মাছুরের এক প্রাস্তে বসিয়া পড়িল । বলিল—ওর নাম মতি। বাঙ্গীদের মেয়ে বটে, কিন্তু অমন মানুষ আপনি আর দেখবেন না । ভাসানপোতায় ওর বাপের বাড়ী অল্প বয়সে বিধবা হয় । আপনি তো জানেন আপনাকে বলেছিলাম মেয়েমামুষের ভালবাসা কি জীবনে কখনও জানিনি। কিন্তু এখন আর সে কথা বলতে পারি নে ডাক্তারবাৰু। ও বাগী হোক, ছলে হোক ওই আমার সে জিনিস দিয়েছে—যা আমি কার কাছে পাইনি কোনো দিন । তারপর সে অনেক কথা। ভাসানপোতা ইস্কুলের চাকুরীটি সেই জন্যে গেল । ওকে নিয়ে আমি এই জেয়ালা-বল্লভপুরে এলাম। সামান্ত কিছু টাকা পেয়েছিলাম ইস্কুলের