পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰিপিমের সংলায় ৩১৭ ৰটে, তাহার উপর নির্ভরশীলতা কেমন যেন আপনিই আসে । গোপাল আসিয়া বলিল-চলুন, নদীতে নাইয়ে নিয়ে আলি। বিপিন বলিল—নদী পর্য্যন্ত আপনার কষ্ট করে যাওয়ার কি দরকার। জামায় দেখিয়ে দিলেই তো... গোপাল তাহাতে রাজি নয়, বিপিন বুঝিল শাস্তিই বলিয়া দিয়াছে তাহাকে নদীর ঘাটে লইয়া গিয়া স্বান করা য়া আনিতে । শাস্তির প্রভাব ও প্রতিপত্তি এখানে খুব বেশী, এমন কি মনে হইল বাপের বাড়ী অপেক্ষা বেশী । .স্বানাহারের পর শাস্তি বাহিরের ঘরে নিজে বিপিনের বিছানা করিয়া দিল। বিপিন বলিল -শাস্তি, আমি দুপুরে ঘুই নে তুমি জানে, বিছানা কিসের—তার চেয়ে বোসে এখানে ছুটে কথাবার্তা বলি । শাস্তি হাসিয়া বলিল—ন তা হবে না, একটু বিশ্রাম করে নিতেই হবে। কাল আবার এখান থেকে আট ক্রোশ রাস্তা গরুর গাড়ীতে গিয়ে ট্রেন ধরতে হবে । —ও কষ্ট কিছু না, তোমার শ্বশুর উঠেচেন কি না দেখ। একবার তার চোখটা দেখি । বিপিন চোখের সম্বন্ধে কিছুই জানে না, তবুও তাহকে ভান করিতে হইল যে সে অনেক কিছু বুঝিয়েছে। শাস্তির শ্বশুরের দুই চারিটি চক্ষুপীড়া সংক্রান্ত অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তরও তাহাকে দিতে হইল । গ্রামখানি বিকালে ঘুৰিয়া দেখিল, পিপলিপাড় ব’ সোনাতনপুরের মতই জঙ্গলে ভর, এ অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামই তাই । শাস্তিদের বাড়ীর পিছনেই তো প্রকাও বাগান, চারিধার বাশবনে ঘেরা, দিনমানেও রোদ ওঠে না সেদিকটাতে বলিয়া মনে হয় । সন্ধ্যাবেলা বেড়াইয়া ফিরিল । বাড়ীর পিছনে ঘন বন-বাগানের ধারে একটি বাভাৰী লেবুতলার টেকি পাতা। সেখানে শাস্তি ও আর একটি প্রৌঢ়া বিধবা মেয়েমানুষ চিড়ে কুটিতেছে—শান্তি তাহাকে সেখানে ডাকিল। বিপিন সেখানে গিয়া দাড়াইল, প্রৌঢ়া বিধবা মেয়েমানুষটি টেকিতে পাড় দিতেছিল, শাস্তি টেকির গড়ে ধান দিয়া যাইতেছে । তাহাকে বসিতে একখানা পিড়ি দিয়া হাসিয়া বলিল—বম্বন। এখানে বসে গল্প করুন আমি সরু ধান দুটো তেনে চাল করে নিচ্চি, কাল সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে । বাবা অন্ত চাল খেতে পারেন না । বিপিন চাহিয়া দেখিল বন-বাগানের আড়াল হইতে চাদ উঠিতেছে। কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয়া, প্রায় পূর্ণচন্ত্রের মতই বড় চাদখান বঁাশবন নিস্তষ্ক, ঝিকি পোকা ডাকিতেছে সন্ধ্যায়, খুব নির্জন গ্রামখানা, লোকজন বেশী নাই, পিপলিপাড়ার হাটতলার চেয়েও নির্জন । কিন্তু বেশ লাগিল এই বন-বাগানের মধ্যে টেকিশালের জায়গাটা, চাদ-ওঠা এই স্বন্দর সন্ধ্যা, শাস্তির স্বমিষ্ট অভ্যর্থনাটি, বাতাবী লেবুফুলের স্বগন্ধ। সে বলিল, তুমি ভারি কাজের মেয়ে কিন্তু শাস্তি। আবার দিব্যি ধান ভানতেও পারে। দেখচি । শাস্তি হাসিয়া ফেলিল। বিধবা মেয়েমানুষটি মুখে কাপড় দিয়া হাসিল । শান্তি বলিল,