পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার e২৭ পরম বিস্ময়ে ও কৌতুহলে লে স্থান কাল পাত্র সব কিছু ভুলিয়া গেল ওভারলিজের তলায়। তাহার বুকের মধ্যে কে ষে হাতুড়ি পিটিতেছে! 8 বিপিন নিজের চক্ষুকে যেন বিশ্বাস করিতে পারিল না, কারণ ৰে মেয়েটি পিছন ফিরিয়া চাহিয়াছিল, সে—মানী ! কয়েক মুহূর্তের জন্ত বিপিনের চলিবার শক্তি যেন রহিত হইল। মানী এদিকে চাহিয়া আছে বটে, কিন্তু তাহার দিকে নয়—তাহাকে সে দেখিতে পায় নাই। বিপিন অগ্রসর হইয়া মানীর সামনে গিয়া বলিল—এই যে মানী ! তুমি এখানে ? মানী চমকিয়া উঠিয়া অন্য দিক হইতে মুহূর্তে দৃষ্টি ফিরাইয়া তাহার দিকে চাহিল। তাহার মুখে বিস্ময়— গভীর, অবিমিশ্র বিস্ময় । বিপিন হাসিয়া বলিল—চিনতে পারচ না ? আমি মানীর মুখ হইতে বিস্ময়ের ভাব তখনও কাটে নাই। পরক্ষণেই সে ট্রাঙ্কের উপর হইতে উঠিয়া হাসিমুখে বিপিনের দিকে আগাইয়া আসিয়া বলিল—বিপিনদা ! তুমি কোথা থেকে ? বিপিন মানীকে ‘তুই’ বলিতে পারিল না, অনেক দিন পরে দেখ, কেমন সঙ্কোচ বোধ হইল। বলিল—আমি ? আমি রাণাঘাটে এসেচি কাজে। বলচি । কিন্তু তুমি এমন সময় এখানে ? মানী চোখ নামাইয়া নীচু দিকে চাহিয়া ধরা গলায় বলিল—তুমি কি করেই বা জানৰে। বাবা মারা গিয়েচেন—কাল চতুর্থীর শ্রাদ্ধ । তাই পলাশপুর যাচ্চি আজ । এই ট্রেনে নামলাম । বিপিন বিস্ময়ের স্বরে বলিল--অনাদিবাবু মারা গিয়েচেন ? কবে ? কি হয়েছিল ? —কি হয়েছিল জানিনে। পরশু টেলিগ্রাম করেচে এখানকার নায়েব হরিবাৰু। তাই আজ আমার দেওরকে সঙ্গে নিয়ে আসচি, উনি আসতে পারলেন না –কেস আছে হাতে । বোধ হয় কাজের দিন আসবেন । দেওর গাড়ী ডাকতে গিয়েচে—তাই বসে আছি। বিপিন দুই চক্ষু ভরিয়া যেন মানীকে দেখিতেছিল। এখনও যেন তাহার বিশ্বাস হইতেছিল ন যে, এই সেই মানী । সেই রকমই দেখিতে এখনও । একটুকু বদলায় নাই । — বিপিনদ, ভাল আছ ? কোথায় আছ, কি করচ এখন ? এখন যে আমি ডাক্তার, নাম-করা পাড়াগায়ের ডাক্তার। রুগী নিয়ে রাণাঘাটের হাসপাতালে এসেচি, রুগীর বাসাতেই আছি। আমাদের দেশের ওই দিকে সোনাতনপুর বলে একটা গ, সেখানেই থাকি। মনে আছে মানী, ডাক্তারি করার পরামর্শ তুমিই দিয়েছিলে প্রথম । তাই আজ ছুটে ভাত করে খাচ্চি।