পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুয়াশার রঙ, ভয়ানক বর্ষ। ক'দিন সমানভাবে চলিয়াছে, বিরাম বিশ্রাম নাই। প্রতুল মেসের বাসায় নিজের সিটটিতে বসিয়া বসিয়া বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছে। কোথায় বা বাহির হইবে ? যাইবার উপায় নাই কোনদিকে, ছাদ চুইয়া ঘরে জল পড়িতেছে—সকাল হইতে বিছানাটা একবার এদিকে, একবার ওদিকে সরাইয়াই বা কতক্ষণ পারা যায় ? সন্ধ্যার সময় আরও জোর বর্ষ। নামিল। চারিদিক ধোয়াকার হইয়া উঠিল, বৃষ্টির জলের কুয়াশার ফাকে ফঁাকে গ্যাসের আলোগুলো রাস্তার ধারে ঝাপসা দেখাইতেছে । প্রতুল একটা বিড়ি ধরাইল। সকাল হইতে এক বাগুিল বিড়ি উঠিয়া গিয়াছে—বলিয়া বসিয়া বিড়ি খাওয়া ছাড়া সময় কাটাইবার উপায় কই ? সিগারেট কিনিবার পয়সা নাই। এই সময়টা সিগারেট খাইয়া কাটাইতে হইলে দুই বাক্স ক্যাভেণ্ডার নেভিকাট সিগারেট লাগিত । প্রতুলের হঠাৎ মনে পড়িল, এবেলা এখনও চা খাওয়া হয় নাই। মেসের চাকরকে ডাকিবার উদ্যোগ করিতেছে—এমন সময় দুয়ারে কে ঘা দিল। হয়তো হরিশ চাকরের মনে পড়িয়াছে তাহার ঘরে চা দেওয়া হয় নাই। দুয়ার খুলিয়া প্রতুল অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল। —এই যে প্রতুলদা, ভাল আছেন ? নমস্কার। এলাম আপনার এখানেই— একটি ত্রিশ বত্ৰিশ বছরের লোক, গায়ে ময়লা পাঞ্জাবি, পায়ে রবারের জুতা, হাতে একটা ছোট টিনের স্বটকেস, সঙ্গে একটি বছর নয় দশের ছোট ছেলে লইয়া ঘরে ঢুকিল। ছাতি হইতে জল গড়াইয়া পড়িতেছে—ভিজা জুতায় ঘরের দুয়ারের সামনের মেঝেটাতে জলে দাগ পড়িল, খোলা দরজা দিয়া ইতিমধ্যে বৃক্টর ঝাপটা আসিয়া ঘরে ঢুকিল। - আয় রে খোকা, যা, গিয়ে বোস গে যা—তোর জ্যাঠামশায়, প্রণাম কর । দাড়া, পা-টা মুছে দিই গামছা দিয়ে- যা— প্রতুল তখনও ঠিক করিতে পারে নাই লোকটা কে, এমন দুৰ্য্যোগের দিনে তাহার আশ্রয় গ্রহণ করিতে আসিয়াছে। দেশের লোক, গ্রামের লোক তো নয়—কোথায় ইহাকে সে দেখিয়াছে ? হঠাৎ তাহার মনে পড়িয়া গেল, এ সেই শশধর, নাথপুরের শশধর গাজুলী । এত বড় হইয়া উঠিয়াছে সেই আঠারো উনিশ বছরের ছোকরা । আর বাল্যের সেই চমৎকার চেহারা এত খারাপ হইয়া উঠিল কিভাবে ? —চিনতে পেরেছেন প্রতুলদা ? —হঁ্য, এসে বসে, ও কতকাল পরে দেখা, তা তুমি জানলে কি করে এখানে আমি আছি ? ভাল আছ বেশ । এটি কে-ছেলে ? বেশ, বেশ । শশধর রাঙ্গা দাত বাহির করিয়া এক গাল হাসিয়া বলিল, তা হলে না ? সে আজ কত বছরের কথা বলুন তো ? আজ বারো ভেরো কি চৌদ্ধ বছরের কথা হয়ে গেল যে !