পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\98も বিভূতি-রচনাবলী অত সহজে ভুলিল না। তাহার মনে দ্বন্দ্ব লাগিয়াছে। কণা তাহাকে সত্যই ভালবাসে, না তাহাকে বিবাহের ফঁাদে ফেলিবার জন্ত ইহা তাহার একটি ছলনা মাত্র ? কণার মা কিজষ্ঠ তাহাকে অত আদর করিয়া থাকেন বা শশধর তাহাকে বাড়ী লইয়া যাইতে অত আগ্রহ দেখায় ইহার কারণ প্রতুলের কাছে ক্রমশঃ স্পষ্ট হইয়া উঠিল । গরীবের মেয়ে, বিবাহ দিবার সঙ্গতি নাই উপযুক্ত পাত্ৰে-সে হিসাবে প্রতুল পাত্র ভালই, ত্রিশ টাকা মাহিনী পায় অফিসে, বয়স কম, দেখিতে শুনিতেও এ পর্যন্ত তো প্রতুলকে কেহ খারাপ বলে নাই। ইহাদের সকল স্নেহ ভালবাসা বা আগ্রহের মধ্যে একটি গৃঢ় স্বার্থসিদ্ধির সন্ধান জানিয়া প্রতুলের মন ইহাদের প্রতি নিতান্ত বিরূপ হইয়া উঠিল । মাস দুই কাটিয়া গিয়াছে। ভাত্র মাস। সাত আট দিন বেশ ঝলমলে শরতের রৌদ্র—খালের ধারে কাশফুল ফুটিয়াছে, জল কাদা শুকাইয়া আসিতেছে। পূজার ছুটির আর বেশী দেরী নাই, প্রতুল বসিয়া বসিয়া সেই কথা ভাবিতেছিল—মিউনিসিপ্যাল অফিসে বার দিন ছুটি । এই সময় একদিন কাহার মুখে প্রতুল শুনিল শশধরের বাড়ীতে বড় বিপদ। শশধরের মা মৃত্যুশয্যায়। শুনিয়; সে ব্যস্ত হইয়া উঠিল। শশধর এদিকে অনেক দিন আসে নাই তা নয়, প্রতুল উহাদের বাড়ী না গেলেও সে এখানে প্রায়ই আসিয়া বসিয়া থাকে, চা খায়, গল্পগুজব করে । কই, মায়ের এমন অমুখের কথা তো শশধর বলে নাই ? প্রতুল শশধরদের বাড়ী গেল। এমন বিপদের সময় না আসিয়া চুপ করিয়া থাকা—সেটা ভদ্রতা এবং মনুষ্যত্ব উভয়েরই বিরুদ্ধে। প্রতুলের কড়া নাড়ার শধে কণা আসিয়া দরজা খুলিয়া দিল। প্রতুলের মনে হইল কণা তাহাকে দরজায় দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছে। প্রতুলই আগে কথ কহিল । বলিল, মা কেমন আছেন ? – আস্কন বাড়ীর মধ্যে । দাদা নেই বাড়ীতে, ডাক্তার ডাকতে গিয়েছে । অবস্থা ভাল না । —চল, চল দেখি গিয়ে । আমি কিছুই জানিনে কণ। অস্বখের কথা, শশধর ক'দিন আমার ওখানে যায়নি। তবে মাঝে যা গিয়েছিল, তখন কিছু বলে নি । —বলবে কি, মার অসুখ আজ সবে পাচ দিন হয়েচে তে । পরশু রাত্তির থেকে বাড়ীবাড়ি যাচ্ছে । এর আগে এমন তো হয় নি । ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া যেটা প্রতুলের চোখে সৰ্ব্বপ্রথম পড়িল, সেটি ইহাদের দারিদ্র্যের কুলী ও মলিন রূপ । সে নিজেও বড়লোকের ছেলে নয়, কিন্তু তবুও তাহাদের বাড়ীতে গৃহস্থালীর যে শ্ৰীছদ আছে, এখানে তার সিকিও নাই । কণা বলিল, এতকাল আসেন নি কেন এদিকে ? আমাদের তো ভুলেই গিয়েছেন। প্রতুলের মনে কষ্ট হইল। কণার ক্লান্ত, উদ্বেগপূর্ণ এবং ঈষৎ বিষন্ন চোখ জুটির দিকে চাহিয়া তাহার মনে হইল সে বড় নিষ্ঠুর কাজ করিয়াছে এতদিন এখানে না আসিয়া। কণা বড় ভাল মেয়ে, যতক্ষণ প্রতুল তাহাদের বাড়ী রহিল ততক্ষণের মধ্যেই প্রতুল জানিতে পারিল