পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©8b- বিভূতি-রচনাবলী —কত টাকা দিলেন ? —সে কথায় দরকার ? সে এমন কিছু নয়—তা ছাড়া ধার –শশধর জাবার আমায়— — দাদা আবার আপনাকে ছাই দেবে। আপনাকে কথাটা বলবো ভেবেচি। কেন আপনি আমাদের পেছনে এমন করে খরচ করবেন ? রোগের সময় টাকা দিয়েছেনআবার কাজের সময় দেবেন! আপনি কি এমন ন'শো পঞ্চাশ টাকা ব্যাঙ্কে জমিয়েছেন শুনি ? মাইনে তো পান ত্রিশটি টাকা । আপনার নিজের বাবা মা ভাই-বোন রয়েছে, তাদের কি দেবেন ? নিজে কি খাবেন ? আপনাকে বলি শুকুন। দাদা বেকার বসে আছে, আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা কখনো আর উপুড় হাত করবে না। ওর ওই স্বভাব। আপনি আর এক পয়সা দেবেন না বলে দিচ্ছি । মায়ের কাজ হোক না হোক আপনার কি ? আপনি কেন দিতে যাবেন ? প্রতুল বিস্থিত দৃষ্টিতে কণার মুখের দিকে চাহিল। কণার মুখে একটি সবল তেজৰী সারল্য ...সত্যবাদী ও.-পষ্টভাষী ওর ভাগর চোখ দুটি, যা খোশামোদ করিতে বা ছলনা করিতে শেখে নাই আজও প্রতুলের মনে হইল । কিন্তু কণা আজ এ কি নতুন ধরণের কথা বলিল ? ভারি আশ্চৰ্য্য কৰা। এতদিন কণাকে চিনিতে পারে নাই সে, আজ চিনিল বটে। শ্রদ্ধার ও সন্ত্রমে প্রতুলের মন পূর্ণ হইয়া উঠিল। কণা সাধারণ মেয়ে নয়। শ্ৰাদ্ধশাস্তি মিটিয়া গেল। প্রতুল নিয়মিত উহাদের বাড়ী যাতায়াত করিতে লাগিল। কণার সেবা অত্যন্ত হইয়া গিয়াছে, লে যত্ন ও সেবায় এতটুকু খুঁত কোনদিন প্রতুলের চোখে পড়িল না আজও । মায়ের শোক খানিকটা প্রশমিত হইবার পরে কণা আরও ক্ষী হুইয়া উঠিয়াছে এখন, পরিস্ফুট যৌবন-ত্র তাহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে । প্রতুল ইতিমধ্যে মনে মনে ভাবিয়া স্থির করিয়াছে কি করিয়া কথাটা এইবার সে পাড়িবে। কথাবার্তা পাকা না হয় রহিল, অশৌচ কাটিয়া গেলে বিবাহ হইতে বাধা কি ! পরের বাড়ীর তরুণী পূর্ণযৌবন মেয়ের সহিত এ ভাবে মেলামেশা উচিত হইতেছে না—একটা পাকাপাৰি কৰা হওয়া ভালো। বৈকালে প্রতুল কণাদের বাড়ী গেল। কণা আসিয়া বলিল, ওইরে বাস্ ! আমি বলেচি কি না বলেচি, প্রতুলা তো এলো বলে! দুখ নেই চা করবার, ওবেলা পিষ্ট দুধের কড়া আলগা করে দিয়েচে, আর সব দ্বধখানি উপুড় করে রেখে দিয়েচে বেড়ালে। —বলো কণা এখানে। চা হবে এখন, তার জন্যে কিছু নয়। কণা এখন মাতৃহীন ছোট ভাইবোনের মায়ের স্থান পূর্ণ করিয়া আছে, সংসারে সেই এখন কন্ত্ৰী, প্রতুল তা জানে। কিন্তু এই ক্ষুদ্র কীটি মাঝে মাঝে কি রকমে ফাঙ্গে পড়িয়া যায় পয়সা কড়ির অভাবে তাহাও প্রতুল দেখিয়াছে। কণা তাহাকে কিছু বলে না—কোনদিন না –কিন্তু সে নানা রকমে টের পায়, যেমন আজই পাইল । কণা কি কাজে একটু উঠিয়া গিয়াছে, প্রতুল কণার ছোট ভাই ৰিছকে ভাকিয়া বলিল,