পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী ee y এক মাসের নোটিশে । এখানে আর থাকিবে না, থাকিয়া লাভ নাই । এই এক মাসের মধ্যে সে কণাদের বাড়ী গেল প্রায় প্রত্যেকদিনই কিন্তু চাকুরীতে নোটিশ দেওয়ার কথা কাহাকেও বলিল না। বিবাহ সম্বন্ধে কণার সাথে আর কোন কথাও সে বলে নাই যদিও কণা আগের মতই তাহার কাছে নিঃসঙ্কোচে আসে, বসে, কথাবার্তা কয় । যাইবার পূৰ্ব্বে সে কণাদের বাড়ী গেল। অন্যান্ত কথাবার্তার পর সে বলিল, কণা, আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি কাল । কণা আশ্চর্ঘ্য হইয়া প্রতুলের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—চলে যাবেন ? কেন ? —চাকুরী ছেড়ে দিচ্চি । —লে কি কথা । –কথা ঠিকই তাই । কাল যাচ্চি। —সত্যি ? —সত্যি। মিথ্যে বলে লাভ কি ? —সেকথা তো একদিনও বলেন নি— —না বলিনি। বলেই বা লাভ কি ? যেতেই যখন হবে। —কেন, এখানে আপনার অসুবিধা কি হচ্ছিল ? ভাল চাকুরী পেয়েছেন বুঝি কোথাও ? —কোথাও না । কণা চুপ করিয়া রহিল। প্রতুলও তাই। খানিক পরে কণা বলিল, যাবেন তা জানতুম। বিদেশী লোক আপনি—আপনাকে তো ধরে রাখা যাবে না। আমাদের কথা আপনি শুনবেনই বা কেন ? —অনেক জালাতন করেচি, কিছু মনে করে না কণা। কণা চুপ করিয়া রহিল। এই পৰ্য্যন্ত সেদিন কণার সঙ্গে কথাবার্তা। পরদিন আর একবার কণাদের বাড়ী যাইবার কথা ভাবিয়াও প্রতুলের যাওয়া ঘটিল না, দুপুরের ট্রেনে প্রতুল চলিয়া আসিল । সারাপথ কেবল কণার কথা মনে হইল প্রতুলের। সেই অভাব অনটনের সংসারে চিরকাল কাটাইতে হইবে তাহাকে । গরীবের ঘরের অল্পবয়সী বিধবা মেয়ে, দাদার সংসার ছাড়া আর উপায় নাই। কণার জীবন অন্ধকার, কোন আলো নাই কোনদিক হইতে । প্রতুলের বুকের মধ্যে কোথায় যেন টন্‌টন করিতেছে। কণাকে কাহার কাছে রাখিয়া যাইতেছে সে । পরক্ষণেই ভাবিল, কি মুশকিল! কণা রয়েচে তার বাপের ভিটেতে ভাইবোনের কাছে, দাদার কাছে। আমার সঙ্গে তার কি ? মাস পাঁচ ছয় পরে, সেই ফাল্গুন মাসেই মায়ের পীড়াপীড়িতে তাহাকে বিবাহ করিতে হইল। প্রভুলের খণ্ডরের দু-তিনটি ছোট বড় কলিয়ারি ছিল। কিন্তু কলিয়ারিগুলির অবস্থা ছিল খারাপ। চুরি হুইত, নির্ভরযোগ্য ম্যানেজারের অভাবে কলিয়ারিগুলি লোকসানী