পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী - \996א কৌতুহল হলো, একবার জিজ্ঞেস করে দেখি না ওরা কোথায় যাবে। কিন্তু ওদের দিক থেকে কথাবার্তার ভরসা না পেয়ে চুপ করে রইলাম। পিয়াসাড়া স্টেশনে এসে গাড়ী দাড়াল। বিশেষ কেউ নামল উঠল না, ছোট স্টেশন । যুবকটি আমায় জিজ্ঞেস করলে –আচ্ছ, স্তার, ওপারে গাড়ী পাওয়া যায় ? আমি ওর দিকে চেয়ে বললাম—কি গাড়ীর কথা বলছেন ? —এই যে-কোন গাড়ী— মোটর-বাস কি ঘোড়ার গাড়ী । লোকটা বলে কি ! এই অজ পাড়াগায়ে ওদের জন্যে মোটরের বন্দোবস্ত করে রাখবে কে বুঝতে পারলাম না। বললাম-না মশায়, যতদূর জানি ও-সব পাবেন না সেখানে । পাড়াগ জায়গা, রাস্তা-ঘাট তো নেই । এবারও ওদের গন্তব্যস্থান সম্বন্ধে আমার কৌতুহল অতি কষ্টে চেপে গেলাম । কিন্তু যুবকটি পরমুহূর্তেই আমার সে কৌতুহল মেটাবার পথ পরিষ্কার করে দিলে । জিজ্ঞেস করলে—ওখান থেকে তিরোল কতদূর হবে জানেন স্তার ? অত্যন্ত আশ্চৰ্য্য হয়ে ওর মুখের দিকে চাইলুম। –তিরোল যাবেন নাকি ? সে তো অনেক দূর বলেই শুনেছি। আমিও এদেশে প্রায় নতুন, ঠিক বলতে পারব না—তবে পাঁচ-ছ ক্রোশের কম নয়। যুবকের মুখে উদ্বেগ ও চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। আমার দিকে একটু এগিয়ে বসে বললে—যদি কিছু মনে না করেন স্যার, একটা কথা বলব ? তবে ইলোপমেণ্টই হবে । যা আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তিরোলে কেন ? সেখানে তো লোকে যায় অন্য উদ্দেশ্যে । বললুম— হ্যা, বলুন না—বলুন । যুবকটি মেয়েটির দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বললে- ওকেই নিয়ে যাচ্ছি তিরোলে । পাগলা কালীর বালা আনতে ওরই জন্তে- আমার বোন, কাল অমাবস্তা আছে, কাল বালা পরা নিয়ম-- বাধা দিয়ে বললাম—মেয়েটি কি – —চুপ করে আছে এখন প্রায় দু-মাস, কিন্তু যখন খেপে ওঠে তখন ভীষণ হয়ে ওঠে, সামলে রাখা কঠিন। এত রাত যে হবে বুঝতে পারি নি, সবাই বলেছিল স্টেশন থেকে বেশী দূর নয়— —আপনার আসছেন কোথেকে? --অনেক দূর থেকে স্তার, ধানবাদের কাছে সয়লাডি কলিয়ারি-এ-দিকের খবর কিছুই জানি নে—লোক যেমন বলেছে তেমনি শুনেছি—কি করি এখন ? ঐ মেয়ে সঙ্গে, বিদেশ-বিভুই জায়গা, বড় বিপদে পড়ে গেলাম যে ! চুপ করে ব্যাপারটা বুঝবার চেষ্টা করলাম। ছোকরা বিপদে পড়ে গিয়েছে বেশ । ওর কথা শোনার পর থেকে মেয়েটির দিকে চেয়ে