পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)●8 বিভূতি-রচনাবলী —জেই নি তো কার টাকায় হোটেল চলছিল এতদিন ? যা কিছু ছিল সব ওর পেছনে খুইয়েছি। —কিছু টাকা পাও নি ? —পেটে খেয়েছি আমি, আমার বোনঝি, আমার এক দেওর-পো এই পৰ্য্যস্ত। পয়সা ষে একেবারে পাই নি তা নয়--তবে কত আর হবে তা ? বোনঝির বিয়েতে কর্তৃ-মশায় এক-শ টাকা দিয়েছিলেন—সে আজ সাত বছরের আগের কথা। সাত শ টাকার স্বদ ধর কত হয় ? —টাকা অনেক দিন দিয়েছিলে ? —আজ ন-বছরের ওপর ত’ল । ওই এক-শ টাকা ছাড়া একটা পয়সা পাই নি—কৰ্ত্ত: মশায় কেবলই ব’লে আসছেন একটু অবস্থা ভাল হোক হোটেলের সব হবে, দেব । —ওঁকে আগে থেকে জানতে নাকি, না রাণাঘাটে আলাপ ? —সে-সব অনেক কথা ঠাকুর । উনি আমাদের গা ফুলে-নব লার চকত্তিদের বাড়ীর ছেলে । ওঁর বাবার নাম ছিল তারাটা চক্কত্তি—বড় ভাল লোক ছিলেন তিনি। অবস্থাও ভাল ছিল তার—আমাদের কৰ্ত্ত হচ্ছেন তারার্টাদ চকত্তির বড় ছেলে । লেখাপড়া তেমন শেখেন নি, বললেন রাণাঘাটে গিয়ে হোটেল করব, পদ্ম কিছু টাকা দিতে পার ? দিলাম টাকা । সে জাজ হয়ে গেল— হাজারি ঠাকুরের মনে কৌতুহল জাগিলেও সে দেখিল আর অন্য কোনো প্রশ্ন পদ্মদিদিকে না করাই ভাল। গ্রামে এত লোক থাকিতে তারাচাদ চক্কত্তির বড় ছেলে তাহার কাছেই টাকা চাহিল কেন, সেই বা টাকা দিল কেন, রাণাঘাটে বেচুর হোটেলে তাহার বি-গিরি করা নিতান্ত দৈবাধীন যোগাযোগ না পূৰ্ব্ব হইতেই অবলম্বিত ব্যবস্থার ফল—এসব কথা হাজারি জিজ্ঞাসা করিলে তাহাকে দোষ দেওয়া যাইত না । কিন্তু হাজারির বয়স হইয়াছে, জীবনে তাহার অভিজ্ঞতা হইয়াছে কম নয়, সে এ-বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করিয়া বলিল—হ্যাওনোটগুলো তুলে রেখে দাও পদ্মদিদি ভাল ক’রে । সব ঠিক হয়ে যাবে, টাকাও তোমার হয়ে যাবে- এগুলো রেখে দাও । পদ্ম কি রকম এক ধরনের হাসি হাসিয়া বলিল—ও সব তুলে রেখে কি করব ঠাকুর ? ওসব কোন কালে তামাদি হয়ে ভূত হয়ে গিয়েছে। পড়ে দেখ না ঠাকুর— হাজারি অপ্রতিভ হইয়া শুধু বলিল—ও! —যা ছিল কিছু নেই ঠাকুর, সব হোটেলের পেছনে দিয়েছি—আর কি আছে এখন হাতে, ছাই বলতে রাইও না । শেষের কথাগুলি পদুঝি যেন আপন মনেই বলিল, বিশেষ কাহাকেও উদ্দেশ করিয়া নহে। হাজারি অত্যন্ত দুঃখিত হইল। পদ্মঝির এমন অবস্থা সে কখনও দেখে নাই—ভিতরের কথা সে জানিত না, মিছামিছি কত রাগ করিয়াছে পদ্মদিদির উপর ! আরও কিছুক্ষঃ বসিয়া হাজারি চলিয়া আসিল, সে কিছুই যখন করিতে পরিবে না