পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w®ግ• বিভূতি-রচনাবলী বললাম, এ-বছর আমার বিয়ে দেবেন বলেছেন বাবা । বলেই সে আমাদের পাতে ডাল না কি পরিবেশন করতে আরম্ভ করলে । আমি তো অবাক, ওর দাদার দিকে চাইতে সে বেচারী আমায় চোখ টিপলে । পাগল হোক, উন্মাদ হোক, মেয়েদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যাবে কোথায় ? বড় কষ্ট হ’ল ভেবে, অভাগীর ও সাধ এ-জীবনে পূর্ণ হবার নয়। 籲 কিন্তু এ ধরনের দু’একটা বেফাঁস কথা ছাড়া পুণিমার অন্য সব কথাবার্তা এমন স্বাভাবিক যে, কেউ তার মধ্যে এতটুকু খুত ধরতে পারবে না। ওর গলার স্বরটা ভারি মিষ্টি—খুব কম মেয়ের গলায় এমন মিষ্টি স্বর শুনেছি। এমন একটি স্বন্দর চালচলন, নিজের দেহটা বহন করে নিয়ে বেড়ানোর স্বত্র ধরন আছে ওর যে ওকে নিতান্ত সাধারণ শ্রেণীর মেয়ে বলে কেউ ভাবতে পারবে না । আমায় বললে আপনাকে আমরা তো বড় কষ্ট দিলুম। আমাদের সয়লাডিতে যাবেন কিন্তু একবার দাদা— — বেশ, যাব বইকি দিদি, নিশ্চয়ই যাব— - এই পূজার সময়েই যাবেন । আমাদের ওখানে দুখান পূজো হয়,একখানা কলিয়ারীর বাবুরা করে আর একখানা বাজারে হয়। শখের থিয়েটার হয়,— ওর দাদা এই সময় বললে—আর একটা জিনিস দেখবেন—সঁাওতালের নাছ, সে একটা দেখবার জিনিস, আমুন পূজার সময়--ভারী খুশী হব আমরা আপনি এলে। • পূর্ণিমা উৎসাহের সঙ্গে বললে—তা হলে কথা রইল কিন্তু দাদা। বোনের নেমস্তন্ন রাখতেই হবে আপনার— এই সময় গৃহস্বামীর মেয়ে দুধ নিয়ে এসে পূর্ণিমাকে বললে আমাদের সকলকে দুধ দিতে। পূর্ণিমা বললে - ত হলে একখানা দুধের হাত নিয়ে এস খকী--ডালের হাতায় তো দুধ দেওয়া যাবে না । পুর্ণিমার এই সমস্ত কথাবার্তার খুটিনাটি আমার খুব মনে আছে, কারণ পরে এই কথাগুলি মনে মনে আলোচনা করবার যথেষ্ট কারণ ঘটেছিল। আহারাদির প্রায় আধ ঘণ্ট। পর আমরা সবাই শুয়ে পড়লুম-পূর্ণমা তার দাদার সঙ্গে বাইরের ঘরের ছোট কামরাটায় এবং আমি বড় কামরাটায় । এবার আমি নিজের কথা বলি। শরীর ও মন বড় ক্লাস্ত ছিল—অল্পক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু কতক্ষণ পরে জানি নে এবং কেন তাও জানি নে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার বুকে যেন পাথরের ভারি বোঝা চাপিয়েছে, নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে। ভাবলুম, নিশ্চয়ই নদীর হাওয়ায় ঠাণ্ড লেগে গিয়েছে কিংবা ওই রকম কিছু। জমন হয়। আবার ঘুমোবার চেষ্টা করি এমন সময় আমার মনে হ’ল পাশের কামরায় কি রকম একটা কৌতুহলজনক শস্থ হচ্ছে। হয়তো পূর্ণিমার দাদার নাক-ডাকার শব্ব অদ্ভূত রকমের নাক ডাকা বটে—যেন গোঙানি বা কাংরানির শব্দের মত। একটু পরেই আর শব