পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী אףס\ হাতে সাংঘাতিক কোপের দাগ, আগের রাত্রে ফুটনো কোটার জন্তে একখানা বক্ত বঁটি গৃহস্থের দিয়েছিল—সেখানা রক্তমাখা অবস্থায় বিছানার ওপাশে পড়ে, পূর্ণিমার শাড়ী ব্রাউজে কিন্তু খুব বেশী রক্ত নেই, কেবল শাড়ীর সামনের দিকটাতে যেন ছিটকে-লাগা রক্ত খানিকট। হতভাগিনী রাত্রে কোন সময় এই বীভৎস কাও ঘটিয়েছে, নিজের হাতে তুাইকে খুন করে ঘরের মেঝেতে অঘোর নিদ্রায় অভিভূত। দিব্যি শাস্ত, নিশ্চিন্ত ভাবে ঘুচ্ছে, জামার যখন জ্ঞান হয়ে ঘরে ঢুকেছি তখনও। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখাচ্ছে কি স্বন্দর, আরও ছেলেমামুষ, নিষ্পাপ সরলা বালিকার মত। নারীর প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসমূৰ্ত্তি সেই ভয়ানক প্রভাতে এক মুহূর্তে আমার চোখের সামনে যেন ফুটে উঠলোঁ—পলকে যে প্ৰলয় ঘটায়, এক হাতে দেয় প্রেম, অন্য হাতে আনে মৃত্যু, এক হাতে বার খড়গ, অঙ্গ হাতে বরাভয় । অতঃপর যা ঘটবার তাই ঘটল। পাড়ার লোক, গ্রামের লোক ভেঙে পড়ল । পুলিশ এল - আমি মেয়েটির অবস্থা সম্বন্ধে যা জানি খুলে বললাম। তাদের জেরার প্রশ্নোত্তর দিতে দিতে আমার মনে হ’ল হয়তো বা আমিই পূর্ণিমার দাদাকে খুন করে থাকব। ঘুমন্ত মেয়েটির পাশ থেকে ওর দাদার মৃতদেহ সরানোর ব্যবস্থা আমিই করে দিলাম--মৃতের সকল চিহ্ন, ৱক্তাক্ত ৰঘ, ইটি, বিছান । উন্মত্ততায় ঘুম সহজে ভাঙে নি তাই রক্ষে—দুপুর পর্য্যন্ত পূর্ণিমা নিরুদ্বেগে ঘুম্বল। পুলিশকেও কষ্ট করে ওর ঘুম ভাঙাতে হলো । জামি ওর পাশে দাড়ালুম এই ঘোর অন্ধকার রাত্রে। অসহায় উন্মাদিনীর আর কে ছিল লেখানে ? যদিও ওর অবস্থা দেখে চোখের জল ফেলে নি এমন লোক সে-অঞ্চলে ছিল না, কি মেয়ে কি পুরুষ—এমন কি থানার মুসলমান দারোগাবাবু পৰ্য্যস্ত।-- সয়লাডি কলিয়ারীতে টেলিগ্রাম করা হলো । ওর বাবা এলেন, তার সঙ্গে এলেন র্তার তিনটি বন্ধু। ওঁদের মুখে প্রথমে শুনলুম, পূর্ণিমা বিবাহিতা। পাগল বলে স্বামী নেয় না— সে কখনও জানে সে বিবাহিত, কখনও আবার ভুলে যায় । পুর্ণিমার মা নেই তাও এই প্রথম শুনলাম । ভদ্রবংশের ব্যাপার, এ নিয়ে খুব গোলমাল যাতে না হয়, শুরু থেকেই তার ব্যবস্থা করা হলো। খবরের কাগজে ঘটনাটি উঠেছিল—কিন্তু একটু অন্যভাবে । কয়েকটি প্রভাবশালী লোকের সহানুভূতি লাভ করার দরুণ ব্যাপারের জটিলতার হাত থেকে আমরা অপেক্ষাকৃত সহজে রেহাই পেলাম । পূৰ্ণিমাকে রাচি উন্মাদ-আশ্রমে দেওয়ার ব্যবস্থা হলো। ওর বাবাও দেখলুম ওকে জার বাড়ী নিয়ে যেতে রাজী নয়। শ্রীরামপুর কোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে ওকে মোটরে সোজা জানা হলো হাওড়া। হাওড়া থেকে রাচি এক্সপ্রেসে যখন ওঠানো হচ্ছে—তখন একগাল ছেলে ও আমার দিকে চেয়ে বললে—আমাদের সয়লাডিতে আসবেন কিন্তু একদিন ? মনে ৰাকৰে তো ? ওর বাবাকে বললে—দাদা কোথায় বাবা । দাদাকে দেখছি নে। দাদার কাছে