পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী "לףס\ নাম,—প্রতিম-বিসর্জন ! দ্বিতীয় পক্ষের পত্নীর মৃত্যুতে শোকোচ্ছ্বাস প্রকাশ করিয়া ভূষণদাদা কবিতা লিখিয়া বই ছাপাইয়াছেন বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। বিহুও তো আর বালোর সেই বিহু নাই । সে বলিল—“মজার কথা শোন, আগের বৌদিদি ষোল বছর ঘর করে ছেলেপুলের মা হয়ে মরে গেল বেচারী, তার বেলা শোকের কবিতা বেরুণে না । দ্বিতীয় পক্ষের বৌদি—দু-তিন বছর ঘর করে উবক বয়সেই মারা গেল কি না—দাদার তাই শোকটা বডড লেগেছে—একেবার—প্র তি—ম — বি স —ন !” ভূষণদাদা আমাকেও একখানা বই দিয়াছিলেন, দু-তিন দিন পরে জামায় বলিলেন“প্রতিমা-বিসর্জন কেমন পড়লে হে ?” অতি সাধারণ ধরণের কবিতা বলিয়া মনে হইলেও বলিলাম, “বেশ চমৎকার!” ভূষণদাদা উৎসাহের সহিত বলিলেন, “বাংলাদেশে উদভ্ৰান্ত- প্রেম’-এর পরে আমার মনে হয়, এ ধরণের বই আর বেরোয় নি। নিজের মুখে নিজের কথা বলছি বলে কিছু মনে করে। না তবে তোমাদের ছোট দেখেছি, তোমাদের কাছে বলতে দোষ নেই।” ভূমণদাদার দাড়ি চুলে বেশ পাক ধরিয়াছে, তাহাকে সমীহ করিয়া চলি, সুতরাং প্রতিবাদ না করিয়া চুপ করিয়। গেলাম। যদিও উদভ্ৰান্ত-প্রেম’-এর প্রতি আমার যে খুব শ্রদ্ধা ছিল তাহা নয়, তবুও ভূষণদাদার কথা শুনিয়া সমালোচনা-শক্তির প্রতি বিশ্বাস হারাইলাম। ভূষণদাদার আর্থিক অবস্থা খুব ভাল নয়, অনেকদিন হইতেই জানি। তিনি ক্যাম্বেল স্কুল হইতে ডাক্তারী পাশ করিয়া দিনাজপুরের এক স্বদূর পল্লীগ্রামে জমিদারদের দাতব্য-চিকিৎসালয়ে চাকুরি করিতেন, স্বাধীন ব্যবসা কোনদিন করেন নাই । এবার শুনিলাম ভূষণদাদার সে চাকুরিটাও যায়-যায়। বিমুই এ সংবাদ দিল । ভূধপদাদা আসার পরদিন জিজ্ঞাসা করিলেন, “ওহে, তোমরা তে কলকাতায় ছাত্রমহলে ঘোর, পাচটা কলেজের ছাদের সঙ্গে দেখা হয়, ছাত্রমহলে আমার বই সম্বন্ধে কি মতামত কিছু শুনেছ ?” হঠাৎ বড় বিব্রত হইয়। পড়িলাম, আমৃত আমৃত স্বরে বলিলাম, “আজ্ঞে ই—তা মত বেশ ভালই— বলেন কি ভূষণদাদা! বিব্রত ভাবটা কাটিয়া গিয়া এবার আমার হাসি পাইল । কলকাতায় ছাত্রমহলে ভূষণ চটিয্যের নামই কেউ জানে না, তার বই পড়া, আর সে সম্বন্ধে মতামত ! ভূষণদাদা উত্তেজিত স্বরে বলিলেন, “কি, কি, কি-রকম বলে? আমার কোন বইটার কথা শুনেছ, পাষাণপুরী না দেওয়ালী ?” মকুলে কুল পাইলাম। ভূষণদাদার বইয়ের নাম কি আমার একটাও মনে ছিল ছাই! বলিলাম, “হ্যা, ওই পাষাণপুরীর কথাই যেন শুনেছি।”