পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী \אףס ভূষণদাদা আর আমায় ছাড়িতে চান না। কি শুনিয়াছি, কোথায় শুনিয়াছি, কাহার কাছে শুনিয়াছি ? পাষাণপুরী তার উপন্যাসগুলির মধ্যে সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট । তবুও তো তিনি পাবলিশার পান নাই, সব বই-ই নিজে ছাপাইয়াছেন, দিনাজপুরের অজ পাড়াগায়ে বসিয়া বই বিক্রী ও বিজ্ঞাপনের কোন মুবিধা করিতে পারেন নাই। বিস্তু আমায় আড়ালে বলিল, “এই অবস্থা, পঞ্চাশটি টাকা মাইনে পান ডাক্তারী করে, সংসারই চলে না, তা থেকে খরচ করেন ওই সব বাজে বই ছাপতে। ভূষণদাদার চিরকালট এক রকম গেল । বাতিক যে কত রকমের থাকে ৷” ইহার পর আরও ছ-সাত বছর কাটিয়া গেল । আমি পাশ করিয়া বাহির হইয়া নানারকম কাজকৰ্ম্ম করি এবং সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু লিখিও । ভূষণদাদার প্রভাব আমার জীবন হইতে সম্পূর্ণ যায় নাই, মনের তলে কোথায় চাপা ছিল, লেখক হওয়া একটা মস্ত বড় কিছু বুঝি ! সেই যে আমাদের গ্রামে বাল্যকালে সেবার ভূষণদাদাকে সম্মান পাইতে দেখিয়াছিলাম, সেই হইতেই বোধ হয় লেখক হওয়ার সাধ মনে বাসা বাধিয়া থাকিবে, কে জানে ? আমার লেখক-জীবন যখন পাঁচ-ছ বছরের পুরাতন হইয়া পড়িয়াছে, দু-চারখানা ভাল মাসিক পত্রিকায় লেখা প্রায়শ: বাহির হয়, কিছু কিছু আরও হইতেছে, সে সময় কি একটা ছুটিতে দেশে গেলাম। বিমুদের বাড়ীতে গিয়া দেখি, ভূষণদাদা অস্বস্থ অবস্থায় সেখানে সপরিবারে কিছুদিন হইতে আছেন। আমায় বলিলেন, “পাচু, শুনলাম আজকাল লিখছ ? কোন কোন কাগজে লেখা বেরিয়েছে ?” কাগজগুলির কয়েকখানি আমার সঙ্গেই ছিল, ইতিমধ্যে গ্রামের অনেকেই সেগুলি দেখিয়াছে। ভূষণদাদাকেও দেখাইলাম—দেখাইয়া বেশ একটু গৰ্ব্ব অনুভব করলাম। ভূষণদাদা কাগজ কখানা উন্টাইয়৷ দেখিয়া বলিলেন, “এইসব কাগজে লিখছ ? বেশ বেশ । এসব তো বেশ নাম-করা পত্রিকা ? একটু ধরাধরি করতে হয়, না ? তুমি কাকে ধরেছিলে ? একটু ধরাধরি না করলে আজকাল কিছুই হয় না। গুণের আদর কি আর আছে ? এই দেখ না কেন, আমি পাড়াগায়ে থাকি বলে নিজেকে পুশ, করতে পারলাম না। আমার "নারদ’-কাব্য পড় নি ? দু-বছর ধরে খেটে লিখেছি, প্রাণ দিয়ে লিখেছি। কিন্তু হলে হবে কি, ওই ধরাধরির অভাবে বইখানা নাম করতে পারছে না । বৈকালে নদীর ধারে বসিয়া ভূষণদাদার মুখে তাহার নারদ’-কাব্যের অনেক ব্যাখ্যা শুনিলাম। অমিত্রাক্ষর ছন্দ হইলেও তাহার মধ্যে নিজস্ব জিনিস কি একটা ঢুকাইয়া দিয়াছেন ভূৰণদাদা, আমন দার্শনিকতা আধুনিক কোন বাংলা গ্রন্থে নাই, এ কথা তিনি জোর করিয়া ৰলিতে পারেন । বলিলাম, "বইখানা ছেপেছে কারা ?”