পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిy: বিভূতি-রচনাবলী কি একখানা বই নিয়ে খুব ঘোরাঘুরি করছে, ওর মাথা আর যুগু ! এদিকে এই অবস্থা, সতের আঠার বছরের মেয়ে একটা, পনের বছরের মেয়ে একটা—পার করবে কোথা থেকে তার সংস্থান নেই—আবার কাল দেখি নিজের পয়সায় একগাদা কি মিটিং না ফিটিং-এর হ্যাওবিঙ্গ ছেপে এনেছে, আর বল কেন, একেবারে মাথা খারাপ!" o বলিলাম, “হ্যা-হ্যা, দেখেছিলুম বটে একখানা হাওবিলে—জনসভা না - কি—" “জনসভা না ওর মুগু, ও নিজেই তো পরশু দুপুরে বসে বসে ওখানা লিখলে! আমার বাড়ীতে দুজন বেকার ভাই-পো আছে, তাদের নিয়ে কোথায় সব ঘুরছে কদিন দেখতে পাই—সাড়ে সতের টাকা প্রেসের বিল কাল দিলে দেখলাম আমার সামনে—এদিকে শুনি, বাড়ীতে নিতান্ত দুরবস্থা-অতবড় সব আইবুড়ো মেয়ে গলায়, এক পয়সার সংস্থান নেই— তার বিয়ে ।” মাঘ মাসের শেষে আমি কার্ধ্যোপলক্ষে জলপাইগুড়ি যাইতেছি, পাৰ্ব্বতীপুর স্টেশনে দেখি, ভূষণদাদা একটি ব্যাগ হাতে প্ল্যাটফর্মে পয়চারি করিতেছেন। আমি গিয়া প্ৰণাম করতেই বলিলেন, “আরে পাচু যে ! ভাল তো ? সেই পশ্চিমেই আজকাল চাকুরি কর তো ? কোথায় যাচ্ছ এদিকে ?” “আঞ্জে একটু জলপাইগুড়িতে। আপনি কোথায় ?” “আমি একটু যাচ্ছি কলকাতায়। হ্যাঁ, তোমাকে বলি—শোননি বোধ হয়, জামার নারদ’-কাব্যের খুব আদর হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় ইনস্টিটুটে হলে প্রকাও সভা হয়ে গেল তাই নিয়ে। অমুক বাবু সভাপতি ছিলেন । খুব উৎসাহ দেখলাম লোকজনের মধ্যে খুব ভিড় –দেখবে ? এই দেখ।” বলিয়াই ভূষণদাদা ব্যাগ খুলিয়া জনসভার ছাপানে হ্যাওবিল একখানা আমার হাতে দিয়া বলিলেন, “পড়ে দেখ ।” প্রত্যাবর্তন কাকীমা তাহাকে গবাক্ষ বলিয়াই ডাকিতেন। গোবিন্দ নামটি উচ্চারণ করিতে তাহার নাকি কষ্ট হুইত, তাই তিনি শব্দটিকে সরল করিয়া লইয়াছিলেন। তিনি প্রায়ই বলিতেন, কি, বিদঘুটে নাম বাপু ! বেছে বেছে নাম রেখেছেন গোবিন্দ । উচ্চারণ করতে মুখ ব্যথা হয়ে যায়। ভেবেছেন ঐ নামে ডেকে বুঝি ভবনদী পার হয়ে যাবেন । মরে যাই আশা দেখে ! আর মাস্টারের তাহার নাম দিয়াছিলেন, ‘গোবরা', কেন না বুদ্ধি বলিয়াই মাফি কোম পদার্থ হতভাগার মাথায় ছিল না । তাহার সারা মাথাটি নাকি গোবরে তরিরা ছিল । মাস্টায়ুদের শিক্ষাগুণে আর সকলেই তাহাকে 'গোবরা' বলিতেই শিখিয়াছিল।