পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\కిy\9 বিভূতি-রচনাবলী যাওয়ার আনন্দ তাহার গ্রাম ত্যাগের দুঃখের চেয়ে গভীর হইয়াছিল। কিন্তু কলিকাতায় আসিয়া তাহার দীর্ঘদিনের মধুর স্বল্প ছিন্নভিন্ন হইয়া গেল। তাহার মনোরাজ্যের কলিকাতাকে সে ফিরিয়া পাইল না। এখানে আকাশ নাই, বাতাস নাই, সবুজ ঘাস নাই, সন্ধ্যার স্বর্ষ্যের অগণিত রঙের খেলা নাই। এখানে মানুষ মানুষকে ভালবাসে না। মানুষ মানুষকে হিংসা করে,"ণ করে। এখানে আছে কেবল 'পড় পড়’ ( উঠিতে বসিতে সৰ্ব্বক্ষণ সে শুনিতেছে ‘পড় পড়'। পড়ার যুপকাষ্ঠে এখানকার সকলেই বলিপ্রদত্ত। এখানকার পাচিলঘেরা ক্ষুদ্রপরিসর গৃহকোণে পড়িয়া থাকিয়া বন্দজীবন কাটাইতে সে সহসা হাপাইয়া উঠিয়াছিল। ছুটাছুটি করিয়া খেলিয়া বেড়াইবার স্থান এখানে নাই। কলিকাতা তাহার নিকট কারাগার বোধ হইল। সেদিন স্কুলে গিয়া সে তলাইয়৷ তলাইয়া অতীতকে দেখিতে লাগিল। সকলেই তাহাকে দূর করিবার জন্য উন্মুখ। এখানে তাহার ঠাই নাই। কিন্তু সে পয়সা চুরি করে নাই। আলুওয়ালাই তাহাকে ঠকাইয়া চারিটি পয়সা লইয়াছে। তাহার স্পষ্টবাদী কাকীমার কাছে এই মারাত্মক সত্য স্বীকার করিতে তাহার সাহস হয় নাই। তাই তাহাকে মিথ্যা মাৱ খাইতে হইল। তারপর স্কুলে সতীশবাবু প্রশ্ন করিলেন, বাঙ্গলা দেশে কটা জেলা ? গোবিদের মুখে কোন কথা সরিল না। ইতিমধ্যে সে তাহার পাঠ রীতিমত ভুলিয়া গিয়াছে। ভূগোল তাহার চক্ষুর সম্মুখে ঘুরিতে লাগিল। তাহার ফল স্বরূপ সতীশবাবু প্তাহার পিঠে দাগ বসাইয়া দিতে ভোলেন নাই। গোবিন্দকে তিনি গাটা মারিয়া মারিয়া কাহিল হইয়া গিয়াছিলেন। সে কাদে নাই। অগত্য তিনি সেদিন তাহার বিখ্যাত গীটার পরিবর্তে ম্যাপে দেখাইবার লাঠিটা ব্যবহার করিলেন। আরও বলিলেন, ছেড়ে দে বাবা, আমাদের ছেড়ে দে, দেশে গিয়ে চাষবাস করগে ! বাড়ীতে ফিরিতেই কাকীমা তাহাকে আপ্যায়িত করিলেন, মানিক আমার, সোনা আমার, এল। লিখে পড়ে এসেছ, একবাটি দুধু খাও । সেই প্রথম গোবিন্দ প্রতিবাদ করিয়া বলিল, না, আমি খাব না। কাকীমাও বলিলেন, ও বাবা! কুলোপান চক্কর ! না খাবি গে আমার ভারী বয়ে গেছে । আমার সাধবার গরজ ! কাকীমা সাধিলেন না, গোবিন্দও থাইতে চাহিল না। সে চুপি চুপি চিলকুঠিতে উঠয়। গেল। চারিদিক নিঃশব্দ। সন্ধ্যা তখন ঘনীভূত হইয়াছিল। মাথার উপর নক্ষত্রখচিত নীল আকাশ বিস্তৃত হইয়া পড়িয়া রহিল। আকাশের এককোণে একফালি চাদ উঠিয়াছিল। তাহার পশ্চাতে একটি বৃহদাকার নক্ষত্র ধক ধকৃ করিয়া জলিতেছিল। দক্ষিণের উদাস বাতাস ধীরে ধীরে বহিয়া যাইতেছিল। গোবিন্দর অনেক কথাই মনে পড়িল । ছেলেবেল হইতে আরম্ভ করিয়া অনেক কাহিনীই তাহার স্বডিসমূদ্র মন্থন করিয়া উঠিতে লাগিল। স্বখ দুঃখ মিশ্রিত কত ক্ষণস্থায়ী দিনের মনোরম ইতিহাস । মুরাস্তর হইতে সেই গ্রামের জাহান