পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী אפגש স্ত্রী নিঃশব্দে গৃহত্যাগ করিল। পরক্ষণেই মিলিত কণ্ঠে দুইজনে ঘোর রবে দিকে দিকে মৃত্যুর বার্তা পৌছাইয়া দিল। রমার স্বামী সমস্ত পুরুষত্ব খোয়াইয় ঘরের কোণে বসিয়া বার বার ডুকাইয়। ডুকরাইয়া কাদিয়া উঠিতে লাগিল। আমি হেন নিষ্ঠুর ব্যক্তিরও চক্ষু যেন ছল ছল করিয়া উঠিল। কমলি এ মরজগৎ হইতে চির বিদায় গ্রহণ করিয়াছে। সহক্স ব্যাকুল আহবানেও সে ফিরিয়া আসিবে না । এ কথা স্মরণ করিতে কোথা হইতে এক অনিৰ্দ্দেশ্য উদ্বেল বায়ু কুণ্ডলী পাকাইয়া পাকাইয়া ব্রহ্মরন্ধের পথ বহিয়া আসিয়া মধ্যপথ হইতে কেন জানি ফিরিয়া গেল। আমার বুক কঁাপিয়া কাপিয়া উঠিল । ঘড়ির পানে চাহিয়া দেখিলাম—কখন আটটা বাজিয়া গিয়াছে। ভাবিলাম, সমস্ত কৰ্ত্তব্যভার আমার উপরই ন্যস্ত হইয়াছে। অামি না করিলে কমলির সৎকারের কোন সম্ভাবনা নাই। কমলির বাপের নিকট গিয়া বলিলাম, রবীনবাবু, আপনি একটু স্থির হোন। স্থির হওয়া তো দূরের কথা, রবীনবাবু বালকের ন্যায় আমায় জড়াইয়া ধরিয়া আকুল হইয়া উঠিল, কি হবে দাদা ! প্ৰবোধ দিলাম, আঃ! আপনার এত বিচলিত হলে চলবে কেন ? আপনি পুরুষ-মহিষ । জানেন তো ভগবান বলেছেন, 'জাতন্ত হি প্ৰবো মৃত্যু: ' কথাটা নিজের কানেই যেন বিধিতে লাগিল। আমার কথায় কোন কাজ হইল না । রবীনবাবু বিন্দুমাত্র তাহাতে কর্ণপাত করিল না। ’ স্বতরাং আমি লোক-সংগ্রহের জন্য বাহির হইলাম। নটার সময় ফিরিয়া সেই একটানা ফ্ৰন্দনধ্বনি শুনিতে পাইলাম। সেই স্বর করিয়া করিয়া পরপারবত্তী বধির যাত্রীর নিকট অসংখ্য অভিযোগ । দেখিলাম, ইহার মধ্যেই আমার স্ত্রীর গলা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে । সে মেঝের উপর লুটাইয়া লুটাইয়া কাদিতেছে, ওরে কমলিরে, পর বলে কি এমনি করে ফাকি দিতে হয় রে } আর রুম ? তাহাকে দেখিয়া অবাক হইলাম। সে কমলির বুকের উপর পড়িয়া কাদিয়া কাদিয়া ক্লাস্ত হইয়া পড়িয়াছে. তাহার কণ্ঠস্বর বিকৃতপ্রায় হইয়াছে —তাহার চক্ষু দুটি ফুলিয়া রাঙ্গ হইয়া গিয়াছে’- পিঠের উপর জমকাল চুলগুলি লুটাইয়া পড়িয়াছে। স্ত্রী কহিল, বাছার একখানা ফটো তুলে রাখ গো। তা না হলে আমি কখনো বঁচিব না। সুতরাং একখানি ফটো তোলা হইল। সেই নিমীলিত চক্ষু, বিবর্ণ মুখের বীভৎস ছবি। সঙ্গীদের মধ্যে একজন বলিল, ঐটুকু মেয়ের আবার ফটো তোলা কেন ? স্ত্রী মেঝের উপর মাথা ঠুকিতে যুঁকিতে স্বর সপ্তমে চড়াইয়াকালি, ওরে কমলি রে, তুই কেন অতিমান করে চলে গেলি রে ? কঠিন মেঝের আঘাতে কোমল কপাল ফুলিয়া উঠিল। তাহার সেই অপ্রান্ত ক্ৰন্দন, সেই মাঞ্চনাদ যেন মৰ্ত্তভূমি ত্যাগ করিয়া অন্তহীন ইথার-সমূদ্র বহিয়া স্বর্গের রুদ্ধারে আঘাত করিয়৷ ইহজগতে ফিরিয়া আসিতে লাগিল। আমরা নিষ্ঠুরের ন্যায় নিজেদের কর্তব্য পালন